অনলাইন ডেস্ক
বিজ্ঞাপন জালিয়াতি রোধে গত বছর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ২০২৪ সালে ৩ কোটি ৯২ লাখ বিজ্ঞাপনদাতার অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে কোম্পানিটি, যা আগের বছরের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। নিজেদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে অ্যাকাউন্টগুলো সনাক্ত করেছে এই টেক জায়ান্ট।
গতকাল বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গুগল জানায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) ব্যবহার করে এবং ভুয়া ব্যবসা ও পেমেন্ট তথ্য বিশ্লেষনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানোর আগেই বিভিন্ন জালিয়াতি অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করেছে কোম্পানিটি।
এদিকে নিজেদের সকল প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে গত বছর ৫০ টিরও বেশি বড় ভাষা মডেল (এলএলএম) সংশোধন ও উন্নত করে গুগল।
গুগলের বিজ্ঞাপন নিরাপত্তা বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার অ্যালেক্স রড্রিগেজ বলেন, ‘এই এআই মডেলগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখনো বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় মানব বিশ্লেষকদের সম্পৃক্ত রাখা হয়েছে।’
রড্রিগেজ জানান, গুগলের অ্যাডস সেফটি টিম, ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি বিভাগ এবং ডিপমাইন্ডের গবেষকসহ ১০০ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞের একটি দল গঠন করা হয়েছে। তারা বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম-চেহারা নকল করে (ডিপফেইক) তৈরি বিজ্ঞাপন শনাক্তে কাজ করছে এবং এর বিরুদ্ধে কারিগরি ব্যবস্থা নিয়েছে।
২০২৩ সালে ৩০ টির বেশি বিজ্ঞাপন ও প্রকাশক নীতিমালায় পরিবর্তন আনে গুগল। সেই সঙ্গে ৭ লাখের বেশি সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে। এর ফলে ডিপফেইক বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত রিপোর্ট ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে গুগল।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ৩ কোটি ৯২ লাখ অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে এবং ১৮০ কোটি বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ছিল বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের অপব্যবহার, ট্রেডমার্ক লঙ্ঘন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভুয়া দাবি, ব্যক্তিগতকৃত বিজ্ঞাপন এবং বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন।
এছাড়া ভারতেও গুগল ২৯ লাখ বিজ্ঞাপনদাতা অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে এবং ২৪ কোটি ৭৪ লাখ বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিয়েছে। মূলত আর্থিক সেবা, ট্রেডমার্ক অপব্যবহার, জুয়া এবং গেমস সম্পর্কিত ভুয়া বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়া হয়।
গুগল জানায়, স্থগিতকৃত অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ৫০ লাখ অ্যাকাউন্ট সরাসরি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং প্রায় ৫০ কোটি প্রতারণা সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সালে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্ধেক জনগণ নির্বাচনে অংশ নেয়, তখন ৮ হাজার ৯০০-এর বেশি নতুন নির্বাচনী বিজ্ঞাপনদাতাকে যাচাই করেছে গুগল এবং ১ কোটির ওপর নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিয়েছে। তবে গুগলের সামগ্রিক বিজ্ঞাপন পরিসংখ্যানের তুলনায় এই সংখ্যা খুবই নগণ্য।
গত বছর মোট ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন বিজ্ঞাপন ব্লক করেছে এবং ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ওয়েব পেজ সরিয়ে নেয় গুগল। আগের বছরে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং ২ দশমিক ১ বিলিয়ন। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, আগেভাগেই জালিয়াতি চিহ্নিত করতে পারার ফলে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন কম তৈরি হচ্ছে এবং তা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছানোর আগেই থামিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
কোম্পানিটি আরও জানিয়েছে, তারা গত বছর ৯ দশমিক ১ বিলিয়ন বিজ্ঞাপনেও সীমিত করেছে।
তবে এত বিপুল পরিমাণ অ্যাকাউন্ট স্থগিত করার ফলে নীতিমালার সঠিক প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে। গুগল বলছে, তারা আপিলের সুযোগ দেয় এবং প্রতিটি আপিল মানব বিশ্লেষকের মাধ্যমে পর্যালোচনা করা হয়।
রড্রিগেজ বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের বার্তাগুলো স্পষ্ট ছিল না—ব্যাখ্যার ঘাটতি থাকত, কেন অ্যাকশন নেওয়া হলো সেটা বোঝা যেত না। তাই আমরা নীতিমালাগুলো আরও আপডেট করেছি এবং ২০২৪ ও ২০২৫ সালে স্বচ্ছতা বাড়ানোকে প্রাধান্য দিচ্ছি।’
তথ্যসূত্র: টেক ক্রাঞ্চ