কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা ভারতের প্রতিক্রিয়ার পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে পাকিস্তান

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা ভারতের প্রতিক্রিয়ার পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপিয়েছে দিল্লি। এতে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। এই ঘটনার দায়ভার পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে ভারত একাধিক কড়া সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি স্থগিত এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভারত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। তবে প্রমাণ ছাড়া দিল্লির এমন প্রতিক্রিয়া ভালো ভাবে নেয়নি ইসলামাবাদ। তাদের অভিযোগ কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দুষছে ভারত। এক্ষেত্রে পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

 

অনলাইন ডন বলছে, ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে দুই ডজনের বেশি মানুষের প্রাণহানির পর ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা মূল্যায়ন করে নয়াদিল্লি কর্তৃক ঘোষিত একাধিক আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেবে পাকিস্তান। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।

বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কিমিটির বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যা পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। সেখানে জানানো হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। চুক্তিটিকে বড় আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে পাকিস্তান। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। দশকের পর দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ধাকলেও এই চুক্তিটি টিকে ছিল। ফলত এই স্থগিতাদেশ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের জটিল মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিন্ধু পানি চুক্তি ছাড়াও ভারত দুই দেশের প্রধান সীমান্ত ট্রানজিট পয়েন্ট বন্ধ এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যা পাকিস্তানের প্রতি কূটনৈতিক আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মূলত এর মাধ্যমে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে চায় ভারত। সীমান্তের সন্ত্রাসবাদকে সরাসরি ইসলামাবাদকে দায়ী করেছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। যদিও পাকিস্তান জোর দিয়ে বলেছে তারা কাশ্মিরের হামলার সঙ্গে জড়িত নয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারত সরকারে বিবৃতির প্রতিক্রিয়া জানাবেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেহবাজ শরীফ। এর আগে সকালে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে বৈঠকে করবেন। উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তার এক্সের পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন। বুধবার গভীর রাতে একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় ইসহাক দার ভারতের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি ওই পদক্ষেপকে অপরিণত এবং তাড়াহুড়ো বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেছেন, ভারত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় কোনো পরিণতভাব দেখায়নি। এভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো অপ্রয়োজনীয় পদ্ধতি। ঘটনা ঘটার পরপরই তারা এ বিষয়ে হাইপ তোলার চেষ্টা করেছে।

বুধবার সকালে এক বিবৃতিতে পহেলগাঁওয়ে নিহতদের প্রতি শোক জানিয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় এক হামলায় পর্যটকদের প্রাণহানির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নিহতদের নিকটাত্মীয়দের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।

মঙ্গলবার বিকেলে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন এবং আহত হন আরও ১৭ জন। উল্লেখ্য, কাশ্মীর ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাম্প্রতিক এই ঘটনার ফলে সেই উত্তেজনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ