ঈদে রাজধানীতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৮ দফা পরামর্শ দিল ডিএমপি

ঈদে রাজধানীতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১৮ দফা পরামর্শ দিল ডিএমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

পবিত্র ঈদুল আজহার আগমনে রাজধানীজুড়ে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। এই সময়টিতে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। উৎসবমুখর পরিবেশে যেন ঈদ উদযাপন করা যায়, সেই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা নির্দেশনা জারি করেছে।

 

মঙ্গলবার (২৭ মে) ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়। ঈদুল আজহা ঘিরে ঘরমুখো মানুষের ভিড়, কোরবানির পশুর হাট ও পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা, চুরি-ছিনতাই ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে সাধারণ জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ ও পুলিশি তৎপরতা মিলেই রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করছে ডিএমপি।

 

ডিএমপির বিজ্ঞপ্তিতে মোট ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. ফিটনেসবিহীন যান ও নৌযানে কোরবানির পশু পরিবহন নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট গন্তব্য ও হাটের নাম স্পষ্টভাবে লিখে রাখতে হবে। অতিরিক্ত পশু বহন করা যাবে না।

২. অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও জালনোট চক্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। অপরিচিত কারও কাছ থেকে কিছু খাওয়া যাবে না। বিক্রির অর্থ ব্যাংকে জমা ও মানি এস্কর্ট সেবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

৩. চাঁদাবাজির খবর থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানাতে হবে।

৪. অনলাইনে পশু কেনাকাটায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।

৫. বাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যাংক, অফিস বা শপিংমলের নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে বলা হয়েছে। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

৬. বাসা-বাড়ি ছাড়ার আগে দরজা-জানালা তালাবদ্ধ ও সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ। দুর্বল দরজা-জানালা মেরামত করে যাওয়া উচিত।

৭. সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও সচল অবস্থায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূল দরজায় অটো লক, নিরাপত্তা অ্যালার্ম এবং পর্যাপ্ত আলো রাখারও পরামর্শ রয়েছে।

৮. মূল্যবান সামগ্রী, টাকা-পয়সা, দলিল ইত্যাদি নিরাপদ স্থানে রেখে যেতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাংকের লকার ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

৯. প্রতিবেশীদের বাসা নজরে রাখার অনুরোধ ও নিয়মিত ফোন যোগাযোগ রাখার পরামর্শ।

১০. ভাড়াটিয়াদের ঈদের ছুটির আগে বাসা ছাড়ার তথ্য মালিককে জানাতে হবে।

১১. অনুমতি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য নিরাপত্তাকর্মীদের সতর্ক করতে হবে। বাড়ির পাশে গাছ থাকলে শাখা-প্রশাখা কেটে ফেলতে হবে।

১২. বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি বন্ধ করে তবেই বাসা ছেড়ে যেতে হবে।

১৩. সন্দেহভাজন ব্যক্তি দেখলে পুলিশকে অবহিত করার নির্দেশ। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে।

১৪. ভ্রমণে নিরাপত্তা মেনে চলার পরামর্শ। অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে যানবাহনের ছাদে বা পণ্যবাহী গাড়িতে চড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

১৫. রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং বা ওভারব্রিজ ব্যবহারের নির্দেশ। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।

১৬. বেপরোয়া গাড়ি চালনা, জয়রাইডিং থেকে বিরত থাকার অনুরোধ।

১৭. ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন বা অদক্ষ চালক যেন গাড়ি না চালায় সে বিষয়ে বাস মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।

১৮. ওভার স্পিড ও ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং বন্ধে ড্রাইভারদের বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবসময় ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে।

 

ডিএমপি কন্ট্রোল রুম ও জাতীয় জরুরি নম্বরে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় নম্বরও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে:
ডিএমপি কন্ট্রোল রুম: ০১৩২০-০৩৭৮৪৫, ০১৩২০-০৩৭৮৪৬, ২২৩৩৮১১৮৮, ০২৪৭১১৯৯৮৮, ০২৯৬১৯৯৯৯
জাতীয় জরুরি সেবা: ৯৯৯

ঈদ আনন্দের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। ডিএমপির এসব পরামর্শ মেনে চললে কোরবানির ঈদ হতে পারে ঝুঁকিমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ। নগরবাসী সচেতন থাকলে পুলিশি প্রচেষ্টা আরও বেশি সফল হবে। ঈদুল আজহা হোক নিরাপত্তা ও শান্তির এক অনন্য উদাহরণ।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ