উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি
নারী পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই চীনা নাগরিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তাঁরা হলেন চীনা নাগরিক হুন জুনজুন (৩০) ও ঝ্যাং লেইজি (৫৪) এবং বাংলাদেশি মো. নয়ন আলী (৩০)।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই চীনা নাগরিক এবং বসুন্ধরা এলাকা থেকে বাংলাদেশি নাগরিককে গত সোমবার (২৬ মে) দিবাগত মধ্যরাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরে মঙ্গলবার রাতে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা করেন। বুধবার (২৮ মে) সকালে বিমানবন্দর এপিবিএন এ তথ্য জানিয়েছে।
এপিবিএন জানায়, গাইবান্ধার এক তরুণী (১৯) এপিবিএনের কাছে অভিযোগ করে বলেন, দুই চীনা নাগরিক তাঁকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার ফাউজুল কবীর মঈনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত দুই চীনা নাগরিককে আটক করে এপিবিএন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ও আটক দুই চীনা নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে দেশি-বিদেশি পাচারকারী চক্র ও ভুক্তভোগী নারী অবস্থান করছেন। সেখানে অভিযান চালিয়ে নয়ন আলী নামের এক বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারী চক্রের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যান। ওই বাড়ি থেকে পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
এপিবিএন আরও জানায়, গ্রেপ্তার দুই চীনা নাগরিক এক বছর আগে বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকতেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের। বাংলাদেশি নয়ন আলীর সহযোগিতায় ভুক্তভোগী তরুণীকে প্রলোভন দেখান। পরে ওই তরুণীর নামে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করেন। ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে চীনা নাগরিক হু জুনজুনের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে দেন। এতে সহযোগিতা করেন অপর চীনা নাগরিক ঝ্যাং লেইজি এবং বাংলাদেশি নয়ন আলী। এরপর তরুণীকে না জানিয়েই তাঁর নামে বিমানের টিকিট কেটে চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে নিয়ে যান।
এ বিষয়ে এপিবিএনের পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, বিমানবন্দর ও বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই চীনা নাগরিকসহ তিনজন গ্রেপ্তারের ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারীর মা বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এপিবিএনের হাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানব পাচারের অপরাধে চীনা নাগরিক গ্রেপ্তারের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। আমরা লক্ষ করছি, বেশ কিছু মানব পাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত। তাঁরা মূলত গ্রামের অশিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের টার্গেট করে প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
‘বিদেশি বউ কেনা’ থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের সতর্ক করল ঢাকায় চীনা দূতাবাস‘বিদেশি বউ কেনা’ থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের সতর্ক করল ঢাকায় চীনা দূতাবাস
উল্লেখ্য, গত রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ‘বিদেশি বউ কেনা’বিষয়ক অনলাইন ম্যাচমেকিং স্ক্যাম থেকে বিরত থাকতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে এ ধরনের অবৈধ এজেন্সি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।