তারুণ্যের সমাবেশে তারেক রহমান নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে হবে

তারুণ্যের সমাবেশে তারেক রহমান নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে হবে

 

বিশেষ প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তরুণ ও যুবসমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এ নির্বাচনের জন্য আপনারা সবাই প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। তারেক রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলছে। অল্প ও বেশি সংস্কারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এ আলোচনা। মনে হচ্ছে সরকারের কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। আদালত নিয়ে সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয়, এমন কোনো পদক্ষেপ (অন্তর্বর্তী সরকারের) নেওয়া ঠিক হবে না।

গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে তারেক রহমান স্লোগান দেন-‘দিল্লি নয় পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ’। বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল যৌথভাবে এ সমাবেশের আয়োজন করে। যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।

‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা’ এ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বেলা ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই নয়াপল্টন এলাকায় নেতা-কর্মীর ঢল নামে। সমাবেশ রূপ নেয় তরুণদের মহাসমুদ্রে। সকাল থেকেই রাজধানীসহ ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে মিছিল নিয়ে আসেন বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের হাতে ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, লাল ও সবুজ রঙের বেলুন। অনেকেই নেচে-গেয়ে স্লোগানে স্লোগানে কর্মসূচিতে প্রাণচাঞ্চল্য যোগ করেন। কয়েক লাখ তরুণ-যুবকের এ সমাবেশ আবারও বার্তা দেয় তারুণ্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। ফ্যাসিস্ট বিদায়ের পর এবার মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর দেশের তরুণ ও যুবসমাজ। নয়াপল্টন ও আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। যানজট এড়াতে নয়াপল্টন সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আগের সরকারে জনগণ দেখেছিল আদালত অবজ্ঞা করার বিষয়টি। ইশরাকের শপথ না পড়িয়ে এ সরকারের মধ্যে তার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করায় আমরা সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।’ জনগণের প্রতি তিনি প্রশ্ন রাখেন-‘যারা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?’

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করার ওপর জোর দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি ১০ মাস পার হলেও নির্বাচনের ঘোষণা করছে না সরকার। আমরা বলে দিতে চাই, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। আপনারা তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন।’ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের কাছে যান, তাদের কথা শুনুন, তাদের প্রত্যাশা বুঝুন। কারণ জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার একমাত্র উৎস।’

দিল্লি নয় পিন্ডি নয় নয় অন্য কোনো দেশ সবার আগে বাংলাদেশ
‘নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে’ অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে বিএনপির একাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে কোনো দলের তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার, দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভিতরে এবং বাইরে কারও কোনো ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।’

তরুণ প্রজন্ম ও দেশবাসীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আপনারা প্রস্তুতি শুরু করুন। কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা প্রতিনিধি হবে সেটা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনারা নির্বাচিত করুন।’ এ সময় তিনি বিএনপি আগামীতে জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিসহ নানান ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা জানান। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে প্রতিটি ৫০ লাখ পরিবারের জন্য ফ্যামিলি কার্ড বিতরণসহ কৃষি, শিক্ষা, মহিলাদের উন্নয়নে বিএনপি এখনই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বলে জানান।

সরকারের লোকদের উদ্দেশে বিএনপির শীর্ষনেতা বলেন, ‘আপনাদের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে সরকার থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচন করুন।’ তিনি বলেন, ‘এখানে যে তরুণ সমাজ উপস্থিত তারা, দেশের নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পায়নি। অতীতে পলাতক সরকারের কাছেও নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এই অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দৃশ্যমান কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

নির্বাচন বিলম্বের যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে : মোশাররফ : ‘জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব করার জন্য অনেকে ষড়যন্ত্র করছে’ উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন বিলম্বের যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, সরকার ওয়াদা দিয়েছিল, অতিদ্রুত মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু ১০ মাসেও তারা ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়নি। অনেকে নির্বাচন বিলম্ব করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।’ তিনি বলেন, ‘সংস্কার আমরাও চাই, কিন্তু এ সংস্কার একা করা যাবে না। আমরা চাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হোক। এ নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে জনগণ। দেশ নির্বাচনমুখী হলে ষড়যন্ত্র থেমে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলেছি, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলে অবশিষ্ট সংস্কার করবে, কথা দিয়েছি।’ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান এবং ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকারের মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত পচে গেছে। সরকার আরও বেশি দিন থাকলে আওয়ামী লীগ যা করেছে, তার চেয়েও খারাপ হয়ে যাবে।’ মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তারুণ্যের এ মহাসমাবেশ বিরাট বার্তা দিচ্ছে। এ সরকার ঔপনিবেশিক সরকার। তারা নয় মাসে যা পারেনি, নয় বছরেও পারবে না এবং ৯০ বছরেও তা পারবে না। অতএব জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে কী করবেন করেন।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আমাদের প্রথম বিজয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি। আমরা বিজয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আজ নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ তারুণ্যের সমুদ্রে পরিণত হয়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণরা জেগে উঠেছে। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আমাদের দেশ ধ্বংস করেছিল। দেশের তরুণ-ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জুলাই-আগস্টে আমাদের প্রথম বিজয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি। আমরা বিজয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি।’ বিচার ও সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিচার ও সংস্কারের নামে নির্বাচন পেছানো যাবে না। আজ ঢাকায় তারুণ্যের সুনামি হয়েছে। লাখ লাখ তরুণ এখানে উপস্থিত হয়েছে একটা স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে, সেই বার্তা হচ্ছে গণতন্ত্র। আর এ গণতন্ত্রের পথ হচ্ছে নির্বাচন। তাই নির্বাচন নিয়ে কোনো হেলাফেলা চলবে না। সংস্কার ও বিচারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। আমরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছি। নিরপেক্ষ সরকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার লক্ষ্য হোক-সবার আগে বাংলাদেশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন বাংলাদেশ।’ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা বলেন, তরুণদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার এখন সংকুচিত। সমাবেশের মাধ্যমে তারা সে অধিকার আদায়ের পথে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ