অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) আবাসিক ভবন ও একাডেমিক স্থাপনার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিরসনসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে হ্যান্ডমাইক ও ব্যানার নিয়ে মিলন চত্বরসহ ক্যাম্পাসে দিনভর বিক্ষোভ করেন তারা। একইসঙ্গে কলেজ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এরই প্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে, হল ত্যাগ না করে নিজেদের দাবি আদায়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢামেক’র মিলন চত্বরে অবস্থান নিয়ে হাতে হ্যান্ডমাইক ও ব্যানারসহ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা-‘প্রহসন মানি না, মানবো না’, ‘দাবি আমাদের- মানতেই হবে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে গত ৭ মাস আগে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসসহ একাধিক ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা এখনো বসবাস করছি। এরপরও কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কলেজ কর্তৃপক্ষ উদাসীনভাবে চলছে। ভবনের ছাদ ও দেয়াল থেকে প্রতিনিয়ত পলেস্তারা খসে পড়ছে, অনেক জায়গায় রড বেরিয়ে এসেছে। এতে যেকোনো সময় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ভবন ধসে কেউ নিহত হলে তার দায় কে নেবে? এই ভবনগুলোতে বসবাসের অভিজ্ঞতা মানেই প্রতিদিন একটা অদৃশ্য মৃত্যু-ভয়ের সঙ্গে বসবাস করা। রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির মতো ভয়াবহ ঘটনা এড়াতে এখনই দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। একদিনের ক্ষোভে নয়, ধারাবাহিক উদ্বেগ ও সচেতনতার ভিত্তিতেই আজকে আমরা এই আন্দোলনে নেমেছি। তারা বলেন, এর আগেও বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কে-৮২ ব্যাচ তাদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম বয়কট করেছে, বিভিন্ন ব্যাচ ক্লাস ও ওয়ার্ড বর্জন করেছে এবং এমনকি প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগানোর মতো প্রতিবাদও হয়েছে। তাও কোনো ফলাফল আসেনি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘কলেজের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে রোববার থেকে একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সব ছাত্রছাত্রীকে দুপুর ১২টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলো।’ তবে পেশাগত ও এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা এই নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবেন। হঠাৎ করে হল ছাড়ার ঘোষণাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বলেন- আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। হঠাৎ করে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করলে আমরা কোথায় যাবো! অপরদিকে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ও হল ছাড়ার ঘোষণার প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তৌহিদুল আবেদীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছি, এটি অন্যায় নয়। তিনি বলেন, পরিত্যক্ত ভবনে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে থাকলেও সেটার বিকল্প ব্যবস্থা না করে উল্টো আন্দোলন দমন করতে প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে একতরফাভাবে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে আমাদের হল থেকে বের করে দিতে চায়। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা হল ত্যাগ করছি না। আমরা এটা মেনে নিচ্ছি না। শান্তিপূর্ণভাবে হলে অবস্থান চালিয়ে যাবো এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচিও চলবে। সাদিয়া ইসলাম মৌলি এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়াই হলে তালা দেয়ার নির্দেশ মানে আমাদের নিরাপত্তা ও শিক্ষা উভয়কেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়া। আমরা আন্দোলনে আছি এবং থাকবো। দাবি আদায় না হলে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তাদের দাবিগুলো হলো-১. দ্রুত নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের বাজেট পাস। ২. নতুন ভবন চালু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা। ৩. নতুন একাডেমিক ভবনের বাজেট অনুমোদন। ৪. পৃথক বাজেট ও দ্রুত বাস্তবায়ন পরিকল্পনা। ৫. কার্যক্রমে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।