ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ

ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

 

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে রণক্ষেত্রের বাইরেও শুরু হয়েছে আরেকটি যুদ্ধ, আর তা হলো তথ্যযুদ্ধ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে বানানো ভুয়া ভিডিও, ভিডিও গেমের ফুটেজকে বাস্তব লড়াই হিসেবে প্রচার এবং চ্যাটবট থেকে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য, এসব প্রযুক্তিনির্ভর বিভ্রান্তি সামাজিক মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার সীমা ভেঙে ফেলেছে। খবর বিবিসির।

ইসরায়েল কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক নেতৃত্বের ওপর হামলার পর এই সংঘাত যখন তীব্র হচ্ছে, তখন একই সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে অসংখ্য ভুয়া তথ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর শনাক্ত করার জন্য প্রযুক্তির অগ্রগতি থাকলেও, বড় বড় প্ল্যাটফর্মগুলো কনটেন্ট যাচাই ও মানব পর্যবেক্ষণ কমিয়ে দেওয়ায় নিরাপত্তা দুর্বল হয়েছে।

গত সপ্তাহে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সে ছড়িয়ে পড়ে একাধিক ভিডিও, যেগুলোতে দাবি করা হয় যে, তেলআভিভ ও বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ব্যাপক ধ্বংস ঘটেছে।

বিবিসির ফ্যাক্টচেক বিভাগ জানায়, এসব ভিডিও আসলে একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে এসেছে। এই অ্যাকাউন্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ভিডিও তৈরি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিটমাইন্ডএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা কেন জন মিয়াচি বলেন, এই যুদ্ধের সময় জেনারেটিভ এআই ব্যবহারে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাত্রা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটি জনমতকে বিভ্রান্ত করতে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।

গেটরিয়াল সিকিউরিটি নামের একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, গুগলের ভিও ৩ নামের এআই টুল ব্যবহার করে তৈরি করা বেশকিছু ভিডিও চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোতে ইসরায়েলি বিমান ধ্বংস বা ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে।

তেহরান টাইমস নামের একটি ইরানি সংবাদমাধ্যম এমনই একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওর নিচে ‘ভিও ৩’ এর জলছাপ স্পষ্ট দেখা গেছে।

গেটরিয়াল সিকিউরিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক হানি ফারিদ বলেন, এই ধরনের ভিডিও সাধারণত আট সেকেন্ডের হয়। ভিডিও আট সেকেন্ড মানেই মিথ্যা নয়। তবে এমন ভিডিও শেয়ার করার আগে যাচাই করা উচিত।

তথ্য যাচাই সংস্থা নিউজগার্ড জানিয়েছে, অন্তত ৫১টি ওয়েবসাইট ১২টির বেশি ভুয়া দাবি ছড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তেলআবিবে গণবিধ্বংসের এআই-ছবি ও ইসরায়েলি পাইলট আটক করার ভুয়া খবর। এইসব তথ্যের উৎস হিসেবে ইরানি সামরিক টেলিগ্রাম চ্যানেল এবং ইরান সরকারের মালিকানাধীন সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি-কে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

নিউজগার্ডের গবেষক ম্যাকেনজি সাদেগি বলেন, ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে ইরানি জনগণই এখন প্রধান টার্গেট। তারা একটি তথ্য-নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বাস করছে। এদিকে ইরানি মিডিয়া অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল হ্যাক করে একটি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে নারীদের বিক্ষোভের ফুটেজ সম্প্রচার করেছে।

এক্সে ছড়ানো একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হচ্ছে। পরে জানা যায়, এটি আসলে আরমা থ্রি নামের একটি ওয়ার গেমের ফুটেজ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই খবরটিকে ‘ফেক নিউজ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এমনকি একাধিক চ্যাটবট, যেমন এক্সএআইয়ের গ্রোক, ভুলভাবে এই ভুয়া ছবিগুলোকেও সত্যি হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

বিটমাইন্ডএআই-এর মিয়াচি বলেন, ‘ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন একটি গুরুতর বিশ্বাস সংকট চলছে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো ভুয়া তথ্য শনাক্তকারী টুল, সংবাদমাধ্যমে শিক্ষার প্রসার এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মের দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ