অনলাইন ডেস্ক
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুজিববর্ষ আয়োজনের নামে রাষ্ট্রের সবকটি প্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা অপচয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্থ নয়ছয়ের এ তালিকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নামও রয়েছে। বিষয়টি তদন্তের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের হাইকমান্ড। এরই মধ্যে সরকারের সব সংস্থাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্তে মাঠে নেমেছে। গত ২২ মে বেবিচকের কাছে খরচের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। জানা গেছে, বেবিচকের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল নির্মাণসহ নানা অনুষ্ঠানের নামে অর্থ নয়ছয়ের তথ্য পেয়েছে দুদক। তদন্তে ফেঁসে যেতে পারেন বেবিচকের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, মুজিবর্ষের নামে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয় বলে নিশ্চিত হয়েছে দুদক। এর মধ্যে শেখ মুজিবর রহমানের নামে ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করে বিপুল অর্থ অপচয় করা হয়। এর পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জড়িত। পাশাাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অতি উৎসায়ী হয়ে রাষ্ট্রের টাকা লোপাট করেছেন। রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধনের অভিযোগ এনে এরই মধ্যে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সাত সদস্যর অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের নকশা ও ডিজাইন তৈরিতে খরচ হয় কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া স্থাপনা এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে ব্যয় হয় ৫ কোটির উপরে। দেশের সবকটি বিমানবন্দরেই বেবিচক বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশাল মুর্যাল নির্মাণ করা হয়। এসব কাজে অর্থ নয়ছয়ের তথ্য পেয়ে গত ২২ মে বেবিচকের চেয়ারম্যানের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় দুদক। চিঠিতে বলা হয়- মুজিববর্ষের সব ধরনের তথ্য উদ্ঘাটন করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যেসব কর্মকর্তা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের নামসহ আনুষঙ্গিক তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, মে মাসের চিঠির পর কিছুদিন আগে দুদক আরও তথ্য চেয়েছে। আমরা দুদককে সব ধরনের তথ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। তিনি বলেন, এর আগেও নানা বিষয়ে দুদক বেবিচক কর্মকর্তাদের নথি তলব করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বেবিচক ঘিরে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত।
জানা গেছে, অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যদের টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এসএম রাশেদুল হাসান, একেএম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অভিযোগে বলা হয়- বিপুল এই ব্যয় এখন অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসেবেই মূল্যায়িত হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১) মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। পরে করোনা মহামারীর কারণে কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করে। এর অংশ হিসেবে সারাদেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য বানানো হয়।
জানা গেছে, সরকারি ৭০০ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জেলা-উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ মিলিয়ে ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। সব জেলা পরিষদে ম্যুরাল নির্মাণে খরচ হয় ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। সড়কের শুরুতে, শেষে, চৌরাস্তায়, নদীর তীরে, পুকুরপাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায়- এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে এগুলো বসানো হয়নি।