নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সংকট হয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা। আগে থেকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের বিষয়টি তো আছেই। এই দুয়ের চাপে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ঘিরে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের জন্য সবচেয়ে বড় এই বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। আর এলডিসি উত্তরণের কারণে রপ্তানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ইউরোপেও অনেক সুবিধা হারাতে হবে। এতে দেশি সংকটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও সংকট মোকাবিলা করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা গতকাল রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআরের (অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ) সঙ্গে বৈঠক করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যে উচ্চ হারের শুল্কারোপের পর তা স্থগিত করে তিন মাস সময় দিলেও দরকষাকষিতে তেমন সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। এখন দ্বিতীয় দফায় দরকষাকষি চলছে। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। এই দরকষাকষিতে সফলতার ওপর নির্ভর করবে আগামীর রপ্তানি বাণিজ্যের অনেক কিছু। এ কারণে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছেন দেশের উদ্যোক্তারা।
এদিকে, ইউরোপের বাজার নিয়েও চিন্তায় রপ্তানিকারকরা। তারা বলছেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ওপর ইউরোপের বাজারের শুল্কমুক্ত সুবিধা আর থাকবে না। এতে বাংলাদেশি পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজারেও তৈরি হবে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা। সব মিলে বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কা করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।
জানতে চাইলে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্কে বড় ধরনের ধাক্কা আসবে রপ্তানিতে। এরই মধ্যে অনেক বায়ার (ক্রেতা) আমাকে বিষয়টি নিয়ে কী হচ্ছে বা কী হবে, তা জানতে চেয়েছেন। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার বিষয়টি ভালোভাবে নেগোসিয়েশন করবে। এ ছাড়া এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কারণে ইউরোপের বাজারেও অনেক সুবিধা বাদ হয়ে যাবে। এতে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজারেও তৈরি হবে নতুন করে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা। বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে দেশীয় গ্যাস সংকট। আর ব্যাংকের নতুন নতুন পলিসি সংকট তো আছেই। সব মিলে দেশি-বিদেশি বাজারে সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের বিষয়ে নেগোসিয়েশন করতে না পারলে অনেক রপ্তানিমুখী কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া খরচ বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি বাণিজ্যেও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চেয়েছি। কিন্তু এখনো সাক্ষাতের সিডিউল পাইনি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক চলছে বলে আমরা জেনেছি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন শুল্কারোপে আমরা উদ্বিগ্ন।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে নিজস্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো, পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যকরণে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের মূল প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের সিংহভাগ আয় আসা পোশাক খাতে যে পড়তে পারে, তা সহজেই বোঝা যায়। এর সঙ্গে যোগ হবে ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির বিষয়টিও। তারা যদি দরকষাকষি করে তাদের ঘাড়ের ওপর থেকে শুল্কের বোঝা কিছুটাও কমাতে পারে, তাতে প্রতিযোগিতার বাজার থেকে বাংলাদেশের ছিটকে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।