স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে শিশু-কিশোরেরা: সমীক্ষা

স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে শিশু-কিশোরেরা: সমীক্ষা

অনলাইন ডেস্ক

 

শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং মনোযোগ ধরে রাখার জন্য নিজেরাই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নতুন এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, তারা মা-বাবার ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব সচেতনতা থেকেই এমন উদ্যোগ নিচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জিডব্লিউআই জানিয়েছে, ২০২২ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও ট্যাব থেকে বিরতি নেওয়ার প্রবণতা ১৮ শতাংশ বেড়ে ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। ১৮টি দেশের ২০ হাজার শিশু ও অভিভাবকের ওপর চালানো এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের (এলএসই) ডিজিটাল ফিউচারস ফর চিলড্রেন সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক সোনিয়া লিভিংস্টোন বলেন, এই প্রবণতা তাদের শিগগির প্রকাশিত গবেষণাতেও দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, শিশুরা বর্তমানে অনলাইন জীবনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় নানা কৌশল অবলম্বন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া, নেতিবাচক বিষয় থেকে মনোযোগ সরানো, ইতিবাচক অনলাইন অভিজ্ঞতা খোঁজা বা পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরে আসা তার মধ্যে অন্যতম।

লিভিংস্টোন বলেন, ‘শিশুরা বুঝে গেছে—অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার তাদের জন্য সব সময় ভালো না। তাই তারা এখন নিজে নিজে চেষ্টা করছে—কে কীভাবে ভালো থাকছে, সেটা নিয়েও একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছে।’

স্মার্টফোন ফ্রি চাইল্ডহুড সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেইজি গ্রিনওয়েল বলেন, অনেক তরুণ এখন ‘অনলাইনেই বড় হতে হবে’—এই ভাবনার বিপরীতে প্রশ্ন তুলছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত এমন কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলি, যারা সারাক্ষণ অনলাইনে থেকে ক্লান্ত। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় তারা নিজ থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারা বুঝে ফেলেছে, এই প্ল্যাটফর্মগুলো নিরপেক্ষ নয়। বরং তাদের সময়, মনোযোগ আর আত্মমর্যাদাকে অর্থে রূপান্তরিত করছে বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। তাই বিরতি নেওয়াটা অনেকের জন্য একপ্রকার বিদ্রোহ।’

এই ধারা অফকমের গবেষণাতেও প্রতিফলিত হয়েছে। ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, অনলাইনে থাকা ৮ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক-তৃতীয়াংশ শিশু মনে করে, তাদের স্ক্রিন টাইম বেশি। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের ৪৭ শতাংশ নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখে এবং ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোড চালু রাখে—২০২৩ সালে এই হার ছিল ৪০ শতাংশ। তুলনায়, বয়স্ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই হার ২৮ শতাংশ।

তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নেয় (যেখানে ২৩ শতাংশ বিরতি নেয় না), ২৯ শতাংশ অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়ার কারণে অ্যাপ ডিলিট করে (১৯ শতাংশ করে না) এবং ২৪ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় অ্যাপ ডিলিট করে (১৩ শতাংশ করে না)।

বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড এলিস বলেন, কিশোর-কিশোরীরা হয়তো তাদের অভিভাবকদের চেয়েও দ্রুত এসব ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ ফিচার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। তবে এসব ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে গবেষণা এখনো মিশ্র।

তিনি আরও বলেন, ‘যদি কেউ স্ক্রিন টাইম কমিয়ে শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত হয়, তাহলে বেশির ভাগ মানুষ এটিকে ইতিবাচক বলেই দেখবে। তবে সময়টা যদি অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয়, তবে লাভ তেমন না-ও হতে পারে।’

১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী অনেক তরুণ দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, তাঁরা মনে করে তাঁদের মা-বাবা স্মার্টফোন ব্যবহারের ব্যাপারে খুব কম বয়সে স্বাধীনতা দিয়ে ভুল করেছেন। অনেকে বলেছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা নিজেদের সন্তানদের হাতে কিশোর-কিশোরী হওয়ার আগ পর্যন্ত স্মার্টফোন তুলে দেবেন না।

এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক তরুণ এমন এক পৃথিবীতে থাকতে চায়, যেখানে ইন্টারনেট নেই। একই সংখ্যক মানুষ ডিজিটাল কারফিউয়ের পক্ষে, আর ৭৫ শতাংশের বেশি তরুণ মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের পর তারা নিজেদের সম্পর্কে আরও খারাপ অনুভব করে।

জিডব্লিউআইয়ের গবেষণায় আরও দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ ও আবাসনের খরচের মতো ভয়গুলোর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি এখন অভিভাবকদের শীর্ষ তিনটি চিন্তার একটি। আবার, ৮ শতাংশ অভিভাবক জানিয়েছেন, নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’ দেখে তারা সন্তানের স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হয়েছেন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

তথ্য প্রুযুক্তি শীর্ষ সংবাদ