উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: স্কুল থেকে মেয়েকে নিতে এসে নিখোঁজ মা

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: স্কুল থেকে মেয়েকে নিতে এসে নিখোঁজ মা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

স্কুল ছুটির ঘণ্টা বাজার কিছুক্ষণ আগেই মেয়েকে নিতে এসেছিলেন লামিয়া ইসলাম সোনিয়া। প্রতিদিনের মতো মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ভবনের সামনে। কিন্তু আজকের দিনটি আর থাকল না আগের দিনের মতো।

বেলা ১টা ১৭ মিনিটে আকাশ থেকে ছুটে আসা বিমানটি আছড়ে পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হায়দার আলী ভবনে। মুহূর্তেই বিস্ফোরণ আর আগুনে ভস্মীভূত সবকিছু। ছিন্নভিন্ন দেহ, পুড়ে যাওয়া বই-খাতা, স্কুলব্যাগ আর জুতা—এই ছিল সেখানের দৃশ্য, যা ভোলার নয় কোনো দিন।

এই বিভীষিকায় নিখোঁজ হন লামিয়া ইসলাম সোনিয়া। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আসমাউল ইসলাম জায়রাকে স্কুল থেকে নিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত মায়ের কোনো খোঁজ মেলেনি।

রাত পৌনে ৮টার দিকে স্কুল চত্বরেই খালার পোড়া জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাথী আক্তার। তিনি বলেন, ‘জায়রা আমার খালাতো বোন। প্রতিদিন খালা তাকে নিতে আসেন। আজও এসেছিলেন। কিন্তু সেই দুর্ঘটনার পর থেকে খালার খোঁজ পাচ্ছি না। সব হাসপাতালে খুঁজেছি। কোথাও নেই। পরে ফেসবুকে একটি পোড়া এনআইডি কার্ডের ছবি দেখে চিনে ফেলি—এটা আমার খালার।’

এ গল্প শুধু একা লামিয়ার নয়, একইভাবে কাঁদছেন শম্পা বেগম। তাঁর হাতে আট বছরের ছোট আফিয়া উম্মে মরিয়মের স্কুল আইডি কার্ড। শম্পা বেগম আফিয়ার চাচি। তিনি ভারী কণ্ঠে বলেন, ‘আমার জায়ের মেয়ে আফিয়া এখানে পড়ে। দুপুরে বিমান বিধ্বস্তের পর থেকে তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছি।’

নিখোঁজ, পোড়া পরিচয়পত্র, নিথর দেহ আর স্বজনদের কান্না—যেন এক মৃত্যুপুরীর নাম হয়ে উঠেছে দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিটি মুখের পেছনে একেকটি গল্প, একেকটি হৃদয়বিদারক বাস্তবতা।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ