বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৭০, বেশির ভাগ শিশু, শরীরের অধিকাংশ দগ্ধ

বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৭০, বেশির ভাগ শিশু, শরীরের অধিকাংশ দগ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

 

রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ ৭০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। আহত ব্যক্তিদের তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশই শিশু, বয়স ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। অধিকাংশেরই অবস্থায় আশঙ্কাজনক। তাদের শরীরের কারও কারও ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে।

বার্ন ইনস্টিটিউটের দগ্ধ ভর্তি রোগীর তালিকায় বলা হচ্ছে, দগ্ধদের মধ্যে অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আটজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে নাফির শরীরের ৯৫ শতাংশ, আব্দুল্লাহ শামীমের ৯০ শতাংশ, শায়ান ইউসুফের ৯৫ শতাংশ, শামিমার ২০ শতাংশ, মাহিয়া তাসনিমের ৪৫ শতাংশ, আফনান ফাইয়াজের ৯৫ শতাংশ, বাপ্পি সরকারের ৩৫ শতাংশ ও মাসুদার ৯৫ শতাংশ পুড়েছে।

অন্যদের মধ্যে তাসনিয়ার শরীরের ৩৫ শতাংশ, ১১ বছর বয়সী আরিয়ানের ৫৫ শতাংশ, আশরাফুল ইসলামের ১৫ শতাংশ, রোহানের ৫০ শতাংশ, শ্রেয়ার ৫ শতাংশ, কাব্যর ২০ শতাংশ, ইউশার ৬ শতাংশ ও রূপী বড়ুয়ার শরীরের ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আরও অনেক শিক্ষার্থীর শরীর বিভিন্ন মাত্রায় পোড়া রয়েছে। হাসপাতালের তালিকায় নওরিন ও মাসুকা নামের দুজনের বয়স বা দগ্ধতার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ৬০ জনের বেশি আহত ভর্তি হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই স্কুলের শিক্ষার্থী। প্রায় সবাই গুরুতর অবস্থায় রয়েছে। কারও কারও দগ্ধ কম হলেও শরীরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পুড়ে যাওয়াতে তাদের অবস্থাও খারাপ।

আজ দুপুরে হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ও যানবাহনে করে রোগী আসছে। জরুরি বিভাগে চিকিৎসকেরা হন্তদন্ত হয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। রক্তদানের জন্য মেডিকেল ভবনের ভেতরে ও বাইরে মাইকিং চলছে। পজিটিভ রক্ত পর্যাপ্ত থাকলেও নেগেটিভ রক্তের সংকট রয়েছে।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাসির উদ্দিন বলেন, মুহূর্তে প্রচুর রোগী আসছে, সবারই অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন কথা বলা সম্ভব নয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত আটজন, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আহত ৭০ জন, ঢাকা মেডিকেলে তিনজন, সিএমএইচে আহত ১৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১১ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আহত ৬০ জন, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত একজন— মোট ১৭১ জন আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছে।

ঘটনার ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে এক শিক্ষক বলেন, ঘটনাটি এতটাই আকস্মিক ছিল যে কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি। স্কুল ছুটির ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ছাত্রছাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়েছিল, তখনই উড়োজাহাজটি ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে। মুহূর্তেই আগুন ও ধোঁয়ায় চারপাশ ঢেকে যায়।

এই ঘটনায় বিকেল থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ হাসপাতালের বাইরে ভিড় করে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের হাসপাতালে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় দগ্ধদের চিকিৎসা চলছে। স্বজনেরা বারান্দা ও করিডরে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছেন।

অন্যদিকে আহত ব্যক্তিদের দেখতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও ছিলেন। এতে হাসপাতালের সামনে ব্যাপক ভিড় তৈরি হয়েছে। বিকেলে এই হাসপাতালে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ