অনলাইন ডেস্ক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার দুপুরে চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির পথসভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
পথসভায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের একজন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আছেন। আপনারা তাকে চেনেন? উনি ড. ইউনূসের ভাই-ব্রাদার কোটায় এসেছেন। তার (ড. ইউনূসের) স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। সব সময় বলে আসছি, এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনারা উনার কোনো অ্যাক্টিভিটি দেখেছেন? তিনি যে বেতন নেন তা হারাম হবে। তিনি সরকারি টাকায় যে গাড়িতে চড়েন তা জনগণের সঙ্গে বেঈমানি। এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কোনো কাজের না। তিনি স্বাস্থ্যব্যবস্থা বোঝেন না, চিকিৎসা বোঝেন না। উনার একমাত্র যোগ্যতা তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে ছিলেন এবং ড. ইউনূসের খুব কাছের মানুষ।
এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা লইয়া আমরা কী করব? এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে যে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে তা জমা দিয়ে তার অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।
রাষ্ট্রব্যবস্থা নিরাপদে চলাফেরার অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, যে বাংলাদেশে আকাশ থেকে বিমান ভেঙে পড়ে, ভবন ভেঙে পড়ে, আমরা সেই রকম বাংলাদেশ চাই না। হাসিনার আমলে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে, আগের সেই দুর্নীতিগুলোর তদন্ত করা উচিত। এই বিমানগুলো হাসিনার আমলে কেনা, সেই সময় হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। আমরা বিমানবাহিনীর ভাইদের নিরাপত্তা চাই, আপনাদের নিরাপত্তার যেসব সরঞ্জাম রয়েছে এসব সঠিক কিনা, ঝুঁকিমুক্ত কিনা আপনাদের বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, দল-মত-নির্বিশেষে আমাদের ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে অংশ নিতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। আমরা শোকাহত। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি এই লাশের ওপর দিয়ে আবার ফেরার চেষ্টা করে, আমরা শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে প্রতিহত করব।
সভায় দলের মুখ্য সমন্বয়ক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশের সিস্টেম সংস্কার, দৃশ্যমান বিচার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এই সরকার যেন অন্য কিছু চিন্তা না করে। শহীদদের মায়েরা কান্না করতে করতে তাঁদের চোখের পানি শুকিয়েছেন। নতুন আরেক জুলাই এসেছে। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান বিচার লক্ষ্য করা যায়নি। জুলাই ঘটনার জন্য দায়ী খুনি হাসিনাসহ জড়িত সবার বিচার করতে হবে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমরা নতুন করে আর লুটপাটের শাসন দেখতে চাই না। চাঁদাবাজ, লুটেরা আর যারা সন্ত্রাস করে, তাদের বাংলার মাটি থেকে চিরতরে উৎখাত করতে হবে।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দলের চাঁদপুর জেলার মুখ্য সমন্বয়ক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. তামিম খানও বক্তব্য দেন। সমাবেশের আগে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেলে কুমিল্লা নগরীর ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে এনসিপির শোকযাত্রা-পরবর্তী সমাবেশে দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, উত্তরার মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ আলু পোড়া দিয়ে খেতে চেয়েছিল। লাশ গুমের গুজব রটিয়ে দেশে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। সরকারকে বলব— লাশ নিয়ে যেহেতু একটি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তাই সঠিক তথ্য জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে। বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।
ওই সময় দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।