তথ্য প্রুযুক্তি ডেস্ক
সাইবার প্রতারণা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আগামীকাল ১ আগস্ট থেকে একজন ব্যবহারকারীর নামে নিবন্ধিত ১০টির বেশি মোবাইল সিম বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের ৬৭ লাখ অতিরিক্ত সিম নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি ২৯৬তম কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি সিমই বৈধ গণ্য হবে। অতিরিক্ত সিম থাকা গ্রাহকদের এসএমএস ও গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবহিত করা হবে। নভেম্বর পর্যন্ত তারা নিজেরা প্রয়োজনীয় সিম রেখে বাকি সিম নিষ্ক্রিয় করতে পারবেন।
নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা : বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এমদাদ উল বারী বলেন, ‘এটি কেবল একটি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি মানুষের নিরাপত্তার বিষয়। প্রতারণা ও অপরাধ ঠেকাতে ব্যক্তির পরিচয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত সিমের সম্পর্ক কমিয়ে আনা সময়ের দাবি। তাই জনগণের ভোগান্তি না হয় এমনভাবে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে।’
জানা গেছে, ২০১৫ সালে এনআইডি দিয়ে সিম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালু হয়। এরপর ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধনের নিয়ম চালু হলেও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১০টির বেশি সিম ব্যবহারকারীর হার মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
বিটিআরসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, ‘একজন গ্রাহকের নামে এতগুলো সিম থাকার যৌক্তিকতা খুবই কম। অপরাধীরা অনেক সময় অন্যের এনআইডি ব্যবহার করে সিম চালু করে প্রতারণা চালায়। এই সীমাবদ্ধতা প্রযুক্তি ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনবে।’
প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে : আগস্ট থেকে মোবাইল অপারেটর ও বিটিআরসি যৌথভাবে এসএমএস, বিজ্ঞপ্তি ও সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে গ্রাহকদের জানাবে তাদের নামে কতটি সিম নিবন্ধিত আছে। গ্রাহক *১৬০০১# ডায়াল করে নিজের এনআইডি-সংযুক্ত সিমসংখ্যাও জানতে পারবেন।
যেসব গ্রাহকের ১০টির বেশি সিম রয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করবে বিটিআরসির ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম’। অপারেটরদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, এসব গ্রাহককে প্রতি সপ্তাহে এসএমএস পাঠিয়ে সতর্ক করা হবে।
গ্রাহক নিজে প্রয়োজনীয় সিম রেখে বাকিগুলো বন্ধ করতে না চাইলে, নভেম্বর থেকে বিটিআরসি নিজ উদ্যোগে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেবে। তবে ভুলবশত প্রয়োজনীয় সিম নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে পুনরায় নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তিনির্ভর সমাজে একটি শৃঙ্খলিত কাঠামো প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেবে। যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এটি অপারেটরদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতা এবং গ্রাহকের অজান্তে সিম ব্যবহারের প্রবণতা কমিয়ে দেবে।
আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিটিআরসি। আর গ্রাহকের সচেতনতা এবং অপারেটরদের সহযোগিতা থাকলে এটি হতে পারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে নীতিনিষ্ঠ সুশাসনের একটি দৃষ্টান্ত।