নিজস্ব প্রতিবেদক
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ৩৯টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে নতুন সীমানার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ সংসদের ২৬১ আসনের সীমানা বহাল রয়েছে। বড় পরিবর্তনের মধ্যে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
গতকাল নির্বাচন কমিশনের অনুমোদনের পর প্রস্তাবিত ৩০০ আসন নিয়ে ১০ আগস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। এবার ভোটারসংখ্যা আমলে নিয়ে ইসির বিশেষায়িত কমিটির সুপারিশ ও সীমানাসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে সংসদীয় এলাকার খসড়া প্রকাশ করা হয়। নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বিশেষায়িত কমিটি ভোটারসংখ্যা ও জনসংখ্যা বিশ্লেষণ করে গাজীপুর ও বাগেরহাট নিয়ে কমানো-বাড়ানোর প্রস্তাব রেখেছিল। বর্তমানে বাগেরহাটে ৪টি ও গাজীপুরে ৫টি আসন রয়েছে। নতুন প্রস্তাবে বাগেরহাটে ৩টি ও গাজীপুরে ৬টি হবে।’ গতকাল বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। এ সময় নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। সীমানা নির্ধারণে বিশেষায়িত কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইসির অনুমোদন নিয়ে এদিন সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করেছি ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। এটা ধরে ওপরের জেলায় একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। বাকিগুলোয় আসন কমবেশি প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। দুই জেলার আসনই অ্যাফেকটেড হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে।’ বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের প্রস্তাব ছিল না জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘খুবই মাইক্রো লেভেলের প্রস্তাব। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সাতক্ষীরাসহ বেশ কয়েকটি জেলায়।’
যেসব আসনে পরিবর্তন করা হয়েছে : পঞ্চগড় ১, ২। রংপুর ৩। সিরাজগঞ্জ ১, ২। সাতক্ষীরা ৩, ৪। শরীয়তপুর ২, ৩। ঢাকা ২, ৩, ৭, ১০, ১৪, ১৯। গাজীপুর ১, ২, ৩, ৫, ৬। নারায়ণগঞ্জ ৩, ৪, ৫। সিলেট ১, ৩। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২, ৩। কুমিল্লা ১, ২, ১০, ১১। নোয়াখালী ১, ২, ৪, ৫। চট্টগ্রাম ৭ ও ৮। বাগেরহাট ২, ৩। এসব আসনের নাম জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘এ প্রস্তাব কমিশনে আমরা উপস্থাপন করেছি। ইসি সেটা অনুমোদন দেয়। ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন (দাবি বা আপত্তি) করা যাবে। এরপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষ করে চূড়ান্ত সীমানার গেজেট প্রকাশ করা হবে।’ সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের এখতিয়ার ইসির। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণ করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ জুলাই সীমানা নির্ধারণে ভূগোলবিদ, নগরবিদ, পরিসংখ্যানবিদসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নয় সদস্যের বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি করা হয়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী এ টিম ৬৪ জেলার ৩০০ আসনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে। আইন অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা, ভৌগোলিক অখ তা ও আদমশুমারিকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হয়। আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আদমশুমারি ২০২২ ধরে কাজ করতে গিয়ে কারিগরি কমিটি দেখলেন অসামঞ্জস্য রয়েছে আদমশুমারিতে। বর্তমানে ইসির হালনাগাদ ভোটারসংখ্যা রয়েছে। সে সংখ্যার ভিত্তিতে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০ কমবেশি গড় ভিত্তিতে গ্রেডিং করে কারিগরি কমিটি। কোন জেলায় ভোটার বেশি, কোন জেলায় কম তা-ও পর্যালোচনা করা হয়।’ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সর্বনিম্ন ভোটারসংখ্যা যে জেলায় সেখানে ফিক্স আপ করেছে। ১, ২, ৩ আসনবিশিষ্ট জেলাগুলোকে আসন বাড়ানো বা কমানোয় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আড়াই শতাধিক আসনের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি আবেদন না আসায় বিদ্যমান সীমানাই বহাল রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ ভোটার রয়েছে এমন জেলায় একটি আসন বাড়ালেও সেখানে জাতীয় গড়ের চেয়েও ভোটার বেশি থাকে। সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে এমন জেলায় একটি আসন কমালে সেখানে জাতীয় গড় ভোটারের কাছাকাছি থাকে। সে ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটি সবচেয়ে বেশি ভোটারের জেলায় একটি আসন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। সর্বনিম্ন ভোটারের জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে।
ছোটখাটো পরিবর্তন : এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০-এর মতো আবেদন পেয়েছে কমিশন। কারিগরি কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী ইসির এ-সংক্রান্ত কমিটি প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে। পরিবর্তন বলতে খুব মাইনর। কোথাও আবেদন করা হয়েছে উপজেলা খি ত করা যাবে না, কোথাও এ ইউনিয়ন রাখলে সুবিধা হয়। কোথাও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরা হয়। এই নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, কারিগরি কমিটির তথ্যানুযায়ী সর্বোচ্চ ভোটার এলাকা গাজীপুর জেলা আর সর্বনিম্ন ভোটারের জেলা বাগেরহাট। সর্বনিম্ন যেটি সেখানে আসন একটি কমানো ও সর্বোচ্চ ভোটার এলাকা গাজীপুরে একটি বাড়ানো হয়।