সবজির বাজারে আগুন

সবজির বাজারে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাজারে সবজির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির আমদানি কম। বৃষ্টির কারণে পরিবহন খরচও বেশি হয়। এ জন্যই দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব অজুহাতের জন্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচাবাজার।
বাজারে গতকাল শুক্রবার সবচেয়ে দামি সবজির মধ্যে ছিল বেগুন, বরবটি, যা প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে সবচেয়ে কম দামের সবজি বলতে মিষ্টিকুমড়া আর পেঁপে, যা প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। বাকি সবজিগুলো সব ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে গতকাল সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হয় ১২০ টাকায়, শসা (দেশি) প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ প্রতি কেজি ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
এছাড়া বরবটি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কচুরলতি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ টাকা, জালি প্রতি পিস ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৪০, টমেটো প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর রামপুরা বাজারে বাজার করতে এসেছেন এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, বাজারে সবজির দাম অনেক বাড়তি। রমজান মাসে বেগুনের কেজি হয় ১০০ টাকা সেটা আমরা অনেকেই মেনে নিয়েছি, কিন্তু এই অসময়ে এসে বেগুনের কেজি হয়েছে ১২০ টাকা। বাকি সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। অনেকদিন ধরে সবজি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে অথচ বাজার মনিটরিং, দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের অতিরিক্ত বাড়তি দামেই সবজি কিনে খেতে হচ্ছে।
মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে কম দামের সবজি বলতে শুধু মিষ্টিকুমড়া আর পেঁপে, যেগুলো কেজি ৩০ টাকা। বাকি সব সবজির অতিরিক্ত দাম। আবার আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে কেনাকাটার চাহিদা বেশি। তাই আজ আবার বেড়েছে সবজির দাম। সবজিই যদি এত দাম দিয়ে কিনে খেতে হয় তাহলে মাছ মাংস কিনব কীভাবে?
সবজির বাড়তি দামের বিষয়ে মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজির দাম আজ একটু বেড়েছে। আমাদের পাইকারি বাজারেই বেশি দামে সবজি কিনতে হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। দাম বাড়লে আমাদের বিক্রির পরিমাণ কমে যায়, কারণ যে ক্রেতা আগে যে সবজি নিতেন এক কেজি সেই ক্রেতাই এখন আধাকেজি করে সবজি কেনেন। মূলত বেশিরভাগ সবজির এখন মৌসুম শেষ সে কারণে বাজারে সরবরাহ কম হচ্ছে। এ ছাড়া কিছুদিন ধরে বৃষ্টির কারণেও বাজারে সবজির দাম বেড়েছে।
এদিকে বাজারে গরু-খাসির মাংস আগের দামে বিক্রি হলেও মুরগির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। সোনালি মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড মুরগি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
লাল লেয়ার মুরগি ১০ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি আগের সপ্তাহের মতোই ১৬০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
মুগদা বাজারের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, ‘সোনালি আর লাল লেয়ারের দামটা কিছুটা বেড়েছে। দুয়েকদিন পর আবারও কমে যেতে পারে। মুরগির দাম তো ওঠানামার মধ্যেই থাকে।’
বাজারে গরুর মাংস আগের মতোই কেজি প্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
বাজারে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হয় ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি চাওয়া হয় ৯০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বাড়ার তথ্য দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়, যদিও আগের সপ্তাহে বিক্রি হয় ৬০ টাকায়।
এছাড়া আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, আদা রকমভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, দেশি রসুন ১৩০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৮০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে এক কেজির চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি বিক্রি হয় ২ হাজার ৬০০ টাকায়। বেড়েছে গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙাসের দামও। বড় আকারের পাঙাস প্রতিকেজি বিক্রি হয় ২৮০ টাকা দরে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬ কেজি ওজনের কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এছাড়া ১০ থেকে ১১ কেজির কাতলা ৮৫০ টাকা প্রতিকেজি বিক্রি হয়। ছোট চিংড়ি প্রতিকেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ফলই ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪৫০ টাকা ও তেলাপিয়া ২২০ কেজি দরে বিক্রি হয়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে বড় মাছের বিক্রি কিছুটা কম। তাছাড়া গত দুইদিন মাছের সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। আবার সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ক্রেতার সংখ্যাও কিছুটা কম।
ক্রেতারা বলছেন, বাজারে মাছ কম থাকায় বিক্রেতারা দাম বেশি চাচ্ছেন। তবে ইলিশের দাম বাড়তে বাড়তে এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ