জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি

জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিবেদক,

 

আজ ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত ও সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী সব থানা/উপজেলায় এবং কাল বুধবার সব জেলা ও মহানগরে বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এতে ঢাকার পাশর্^বর্তী এলাকার নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন বলে দল থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে ৫ আগস্ট ‘ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস’ উদযাপন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সেদিন সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে শহীদদের কবর জিয়ারত, বিজয় র‌্যালি ও আলোচনা সভা।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ দেশব্যাপী গণমিছিল করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গত শনিবার দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। পরওয়ার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বঘোষিত মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ গণমিছিল সফল করতে দেশের সব মহানগরী ও জেলা শাখার নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে গণমিছিল সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

একই দিনে সারা দেশে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান দিবস পালন করবে বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে সারা দেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালনের জন্য সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে নেতারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সিপিবির উদ্যোগে কেন্দ্রীয়ভাবে আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় পুরানা পল্টন মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জুলাই অভ?্যুত্থান : অনুপ্রেরণা, আত্মপর্যালোচনা ও প্রত?্যয়দীপ্ত অঙ্গীকারে এক বছরের মূল্যায়ন’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। এতে উপস্থিত থাকবেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ সিনিয়র নেতারা।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা ও ফ্রি রুটিন ইনভেস্টিগেশনসহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় (বিএমইউ)। এ আয়োজনের উদ্বোধন করবেন বিএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম।

বায়তুল মোকাররমে দোয়া ও মোনাজাত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় আজ বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআন খতম এবং বাদ জোহর দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত আয়োজনের জন্য খতিব, ইমাম ও মসজিদ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রয়েছে পৃথক পৃথক আয়োজন।

জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে গতকাল তিনি জবানবন্দি দেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই বিচার চলছে।

জবানবন্দিতে ইমরান বলেন, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিদর্শনে গিয়ে শেখ হাসিনা ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট ’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ নির্দেশ শুনেছেন বলে সাক্ষী আদালতকে জানান।

ইমরান বলেন, গত বছর ১৯ জুলাই রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তার বাঁ হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। পঙ্গু হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল। ২৬ অথবা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা-১০টার দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই হাসপাতালে আসেন। একপর্যায়ে হাসিনা তার কাছে যান। হাসিনাকে তিনি ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করেন। হাসিনা তাকে ‘আপা’ বলে ডাকতে বলেন।

ইমরান আরও বলেন, তিনি কোথায় পড়াশোনা করেন, হলে থাকেন কি না, কেন থাকেন না, সে সম্পর্কে হাসিনা জানতে চান। জবানবন্দিতে ইমরান বলেন, ‘একপর্যায়ে শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন, আমি আন্দোলনকারী। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, পুলিশ তোমাকে গুলি করেছে? আমি বলি, পুলিশ আমাকে সরাসরি গুলি করে। পুলিশের পোশাকে কারা ছিল, সেটা আমি জানি না। আমার পর আরও চার থেকে পাঁচজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। পরে শেখ হাসিনা যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন হেল্পডেস্কের কাছে গিয়ে ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডার দিয়ে যান, যা আমি শুনতে পাই।’

তবে ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ মানে কী, তখন বুঝতে পারেননি বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন ইমরান। তিনি বলেন, একপর্যায়ে তিনি দেখেন যথাসময়ে তার অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে পারছেন না। তার বাবা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চাইলেও নিতে পারছিলেন না। তখন তিনি বুঝতে পারেন ‘নো রিলিজ নো ট্রিটমেন্ট’ মানে কী। তার পা কেটে তাকে কারাগারে নিতে চেয়েছিল।

এ ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা এবং মামলার অন্য আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দায়ী করেন ইমরান।

গত রবিবার এ মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ। রবিবারই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়।

এ মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। অন্য আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি এ মামলার রাজসাক্ষী।

বিচার নিয়ে যা বলছেন ডেভিড বার্গম্যান

এদিকে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। তিনি এক সময় এ ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে প্রতিবেদন করেছেন। পরে বেশ কয়েক বছর ধরে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম ও বাংলাদেশ নিয়ে লিখে আসছেন বার্গম্যান।

গত রবিবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে ডেভিড বার্গম্যান লিখেছেনÑ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তার বিচারের প্রথম দিন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমার কিছু উদ্বেগ রয়েছে। আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত এক আইনজীবী, দুই মক্কেল। এটি বড় ধরনের সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাতের সমস্যা তৈরি করে, যা তাদের প্রত্যেকের যথাযথ আইনি সুরক্ষা প্রাপ্তিতে বাধা। প্রত্যেক পলাতক আসামির পক্ষে অবশ্যই আলাদা একজন আইনজীবী থাকা উচিত। সিদ্ধান্তটি ট্রাইব্যুনালকেই নিতে হবে।

বার্গম্যান আরও বলেন, আমি মনে করি, কোনো আইনজীবীর পক্ষে উভয় মক্কেলের জন্য যথাযথ আত্মপক্ষ সমর্থনের কৌশল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব, বিশেষ করে যখন আইনজীবী তার মক্কেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ