অনলাইন ডেস্ক
অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে রিভিউ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ কেনাকাটার আগে অধিকাংশ মানুষই এখন অন্য ব্যবহারকারীর রিভিউ পড়ে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর রিভিউয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকায় কোনটি আসল আর কোনটি ভুয়া তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট মেকইউজঅব ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর রিভিউ শনাক্ত করার জন্য নয়টি সতর্কসংকেত তুলে ধরেছে—
অতিরিক্ত আবেগ
সাধারণত রিভিউতে পণ্যের ভালো-খারাপ দুই ধরনের রিভিউই থাকে। রিভিউ যদি অতিরিক্ত ইতিবাচক হয়, যেমন ‘এটি আমার জীবন বদলে দিয়েছে’ বা কড়া নেতিবাচক হয় তবে তা সন্দেহজনক। আসল রিভিউতে সাধারণত পণ্যের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই উল্লেখ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন তারকা রিভিউ অনেক সময় সবচেয়ে সাহায্যকারী, কারণ এতে তুলনামূলক ভারসাম্য থাকে।
অতিরিক্ত ব্যক্তিগত গল্প
ভুয়া রিভিউতে প্রায়ই নাটকীয় ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে। যাতে আবেগ তৈরি করে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু পণ্যের ব্যাপারে তেমন তথ্য থাকে না। যেমন ‘আমি কখনো রিভিউ লিখি না, তবে এবার লিখছি’ ধরনের বাক্য সন্দেহ তৈরি করে।
অতিরিক্ত সঠিক বা অতিরিক্ত ভুল ব্যাকরণ
যদি রিভিউ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে লেখা হয়, তবে তা এআই দিয়েও তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে খুব খারাপ বা অস্বাভাবিক ভাঙা ইংরেজিতে লেখা রিভিউ সাধারণত অন্য দেশে ক্লিক ফার্মের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। উভয়ই প্রকৃত রিভিউয়ের তুলনায় কম নির্ভরযোগ্য।
পণ্য ব্যবহারের অভিজ্ঞতা অনুপস্থিত
কোনো রিভিউতে যদি শুধু ডেলিভারি সমস্যা বা সাধারণ প্রশংসা, যেমন ‘দারুণ প্রডাক্ট’ থাকে, তবে সে রিভিউটি ভুয়া হতে পারে। আসল রিভিউতে সাধারণত পণ্যের বিস্তারিত তথ্য ও ব্যবহারসংক্রান্ত নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা থাকে।
প্রমাণহীন রিভিউ
অ্যামাজনের মতো প্লাটফর্মে ‘ভেরিফায়েড পারচেজ’ ট্যাগ থাকে। তবে এটিও সবসময় নির্ভরযোগ্য নয়, কারণ অনেক বিক্রেতা নিয়ম ভেঙে রিভিউয়ারকে টাকা ফেরত দেয়। ফলে রিভিউ আসল কিনা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
ফ্রি বা ডিসকাউন্ট পণ্য
যদি কেউ বলে পণ্যটি বিনামূল্যে পেয়েছেন, তবে রিভিউ পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। অ্যামাজনের ভাইন প্রোগ্রামে এ রকম রিভিউ দেয়া হয়। তবে এর বাইরে সাধারণত ইতিবাচক বা মিশ্র রিভিউই বেশি হয়।
ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রিত রিভিউ
অনেক কোম্পানির ওয়েবসাইট খারাপ রিভিউ সরিয়ে কেবল ভালো রিভিউ দেখায়। যদি রিভিউ ক্লিক করা না যায় বা সবই ৪.৫-৫ স্টার হয়, তখন সতর্ক হওয়া উচিত।
অতিরিক্ত হাস্যরস
হাস্যরসাত্মক রিভিউ বিনোদন দেবে, কিন্তু পণ্য সম্পর্কিত তথ্য নয়।
একই ধরনের রিভিউর পুনরাবৃত্তি
একই ধরনের বাক্য, হঠাৎ অনেক রিভিউ বা সব পাঁচ তারকা দেয়া অ্যাকাউন্ট সতর্কতার ইঙ্গিত দেয়। এগুলো এআই-জেনারেটেড বা পেইড রিভিউ হতে পারে। রিভিউয়ারের অ্যাকাউন্ট ও তারিখ পরীক্ষা করে সন্দেহজনক কার্যক্রম চিহ্নিত করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শতভাগ নিশ্চিতভাবে ভুয়া রিভিউ চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট যেমন ফেকস্পটের মতো ভুয়া রিভিউ চেকার এখন সবসময় পাওয়া যায় না। তাই ক্রেতাদের উচিত সচেতনভাবে বিবেচনা করা, একাধিক উৎস পরীক্ষা করা এবং বিস্তারিত, স্পষ্ট ও ভারসাম্যপূর্ণ রিভিউয়েই বিশ্বাস রাখা। এসব টিপস অনুসরণ করলে ক্রেতারা বিভ্রান্তিকর তথ্য এড়িয়ে নিরাপদ ও সচেতনভাবে অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারবেন।