১৯৫৯ সালে ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘আসিয়া’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অভিনেত্রী সুমিতা দেবীর। এ অভিনেত্রীর জন্ম ব্রাহ্মণ পরিবারে। তখন তাঁর নাম ছিল হেনা ভট্টাচার্য। চলচ্চিত্রে আসার আগেই সুমিতা দেবীর বিয়ে হয়েছিল অমূল্য লাহিড়ী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরুর পর চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও প্রেম হয়। ১৯৬১ সালে সুমিতা দেবী অমূল্য লাহিড়ীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ধর্মান্তরিত হন এবং নিলুফার বেগম নাম নিয়ে জহির রায়হানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। উল্লেখ্য, নির্মাতা ফতেহ লোহানী তাঁর পরিচালিত ‘আসিয়া’ ছবিতে কাজ করার সময় তাঁর হেনা নাম পাল্টিয়ে ফিল্মি নাম সুমিতা দেবী রাখেন। জহির রায়হানের সঙ্গে সুমিতার দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটছিল। এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় দুই সন্তান অনল রায়হান ও পার্থ রায়হান। কিন্তু এই সুখের ঘরে দুঃখের আগুন জ্বলতে খুব বেশি দেরি হলো না। ১৯৬৬ সালে জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবিতে নায়িকা হয়ে এলেন সুচন্দা। ছবিটির কাজ চলাকালেই জহির রায়হানের সঙ্গে ভাববিনিময় হয় সুচন্দার এবং ১৯৬৭ সালে তারা বিয়ে করেন। সুমিতা দেবী এক বুক হাহাকার নিয়ে জীবদ্দশায় বলে গিয়েছিলেন, ‘ছেষট্টি সালে আমার প্রযোজনায় ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবির কাজ শুরু করি। এ ছবির পরিচালক জহির রায়হান। ছবির মূল নায়িকা চরিত্রে আমি সুজাতাকে নির্বাচন করি। কিন্তু এ সময় জহির আমাকে এ চরিত্রের জন্য সুচন্দাকে নিতে বলেন। যেহেতু সুচন্দা ‘বেহুলা’ এবং ‘আনোয়ারা’ ছবিতে কাজ করেছে, সেহেতু ‘আগুন নিয়ে খেলা’তেও তাকে নিলে-ইউনিটটা একদম নিজেদের ইউনিট হয়ে যায়। এই ছিল জহিরের যুক্তি। কিন্তু সুচন্দাকে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলাম না আমি। কেননা, ছবি নির্মাণ করলে সুজাতাকে নেব, এটা অনেক আগে থেকেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল আমার। তা ছাড়া তখন জহির-সুচন্দার সম্পর্ক নিয়ে নানা রকম কথা উঠেছে। প্রায়ই কানে আসত নানা কথা। শেষ পর্যন্ত আমার অমতে সুচন্দাকে নিয়ে কাজ করল জহির। একবার তো ‘আনোয়ারা’ ছবির শুটিংয়ের সময় জহির-সুচন্দার সম্পর্ককে ঘিরে রানী সরকারের সঙ্গে জহিরের তুমুল বাগ্বিতণ্ডা হয়ে যায়। সে সময় ইউনিটের প্রত্যেকেই এ বিষয়ে কানাঘুষা করত। কিন্তু সাহস করে কেউ জহিরের মুখোমুখি হতো না। ‘আনোয়ারা’ ছবির লোকেশনে জহির এবং সুচন্দা বেশ খোলামেলাই মিশতে শুরু করেছিল। আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে রানী সরকারের কাছে এই মেলামেশাটা ভালো লাগেনি। রানী সরকার জহিরের কাছে এর প্রতিবাদ করেছে। যার ফলে ‘আনোয়ারা’র পর জহিরের আর কোনো ছবিতে রানী সরকারকে দেখা যায়নি। জহির আর তাকে ডাকেনি। বিস্তারিত