৫জি নেটওয়ার্ক ৫জি কী, কেন প্রয়োজন কীভাবে কাজ করে?

৫জি নেটওয়ার্ক ৫জি কী, কেন প্রয়োজন কীভাবে কাজ করে?

 

তথ্য প্রুযুক্তি   ডেস্ক

 

 

প্রযুক্তি বিশ্বে দিনদিন সবকিছুই বদলে যাচ্ছে। টুজি, থ্রিজি ও ৪জি-এরপর এখন গোটা পৃথিবীতে চালু হয়েছে ৫জি (5G)। অপারেটররা ২০১৯ সাল থেকে এর নেটওয়ার্ক চালু করা শুরু করেছে এবং এর ব্যবহারও বাড়ছে…

৫জি মানে কী?

ইংরেজিতে টুজি, থ্রিজি, ৪জি বা ৫জিতে ব্যবহৃত ‘জি’ অর্থ জেনারেশন বা প্রজন্ম। ৫জি হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি (তারহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি)। যা আগের সব সংস্করণগুলোর চেয়ে অনেক বেশি এবং দ্রুত ফ্রিকোয়েন্সিতে চলতে সক্ষম। এ নেটওয়ার্কের বিশাল ক্ষমতা রয়েছে, যা একই সঙ্গে আরও অনেক ডিভাইসকে মোবাইল ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের সুযোগ দেয়- এমনকি উচ্চ নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক জায়গাতেও।

 

থ্রিজি বনাম ৪জি বনাম ৫জি : পার্থক্য কী?

♦ সত্তর দশকের শেষে প্রথম প্রজন্ম অর্থাৎ ১জি এসেছিল। যা সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অ্যানালগ ভয়েস কল করা যেত।

♦ ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে প্রথম প্রজন্ম (১জি)-কে ২জি-তে আপগ্রেড করা হয়েছিল, যা ডিজিটাল ভয়েস সক্ষমতা নিয়ে আসে।

♦ বিংশ শতাব্দীর (২০০০ সাল) শুরুতে, থ্রিজি আমাদের মোবাইল ডেটা এবং আমাদের ফোনে ইন্টারনেট সার্ফ করার ক্ষমতা দিয়েছিল।

♦ চতুর্থ প্রজন্ম, ৪জি (‘লং টার্ম ইভোলিউশন’ বা এলটিই প্রযুক্তি নামেও পরিচিত), মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে সক্ষম হয়। তবে অবকাঠামোটি ইন্টারনেটের অ্যাক্সেসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং পরবর্তীকালে উৎপন্ন ডেটার দ্রুত বৃদ্ধির জন্য ডিজাইন করা হয়নি।

♦ এর অর্থ ছিল আরেকটি আপগ্রেডের সময় অর্থাৎ ৫জি। যা দ্রুত ডাউনলোড এবং আপলোড গতি প্রদান করতে সক্ষম।

পঞ্চম প্রজন্মের ৫জি; ৪জি এবং ৩জি নেটওয়ার্কের মতো একই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। তবে এটি তাদের গতি, ল্যাটেন্সি এবং নির্ভরযোগ্যতাকে অতিক্রম করতে সক্ষম। ৫জি প্রতি সেকেন্ডে ২০ জিবিপিএস (Gbps) পর্যন্ত সর্বোচ্চ ডাউনলোড করতে পারে, যেখানে ৪জি নেটওয়ার্ক পারে মাত্র ১ জিবিপিএস। এর ল্যাটেন্সিও অনেক কম। তথ্য পাঠানো বা গ্রহণ, মাত্র এক মিলিসেকেন্ড সময় নেয়, যেখানে ৪জির নেয় ২০০ মিলিসেকেন্ড। তা ছাড়া এটি আরও বিস্তৃত ব্যান্ডউইথেও চলতে সক্ষম। অর্থাৎ যে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে আরও বেশি ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে। এটি ৪জির চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ডেটা ভলিউম পরিচালনায় সক্ষম। যা পূর্ববর্তী যে কোনো প্রজন্মের চেয়ে দ্রুত এবং আরও দক্ষ। এর আরেকটি পার্থক্য হলো- ব্যবহৃত ট্রান্সমিটারের ধরন। ৪জি এবং এর পূর্বসূরিদের জন্য বড় standalone মোবাইল টাওয়ারের প্রয়োজন ছিল, যার জন্য প্রচুর শক্তি লাগত। তবে ৫জি ছোট ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে, যা ভবন এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে স্থাপন করা যায়।

 

৫জি প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?

৫জি পূর্ববর্তী নেটওয়ার্কের মতোই সেলুলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যেখানে পরিষেবা ছোট এলাকা বা ভৌগোলিক অংশে বিভক্ত, একে সেল বলা হয়। প্রতিটি সেল সাইটে একটি বেস স্টেশন এবং অ্যান্টেনা থাকে এবং এটি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ডেটা প্রেরণ করে। একটি সেলের সীমানার মধ্যে থাকা যে কোনো ৫জি ওয়্যারলেস ডিভাইস নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারে। পার্থক্য হলো ৫জি প্রযুক্তি ডেটা এনকোড করার পদ্ধতি পরিবর্তন করে। এটি ওএফডিএম (OFDM) (অর্থোগোনাল ফ্রিকোয়েন্সি-ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং)-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এর অর্থ এটি হস্তক্ষেপ কমাতে বিভিন্ন চ্যানেলে একটি ডিজিটাল সংকেত মডুলেট করতে পারে। এটি উচ্চ-ব্যান্ড এয়ারওয়েভগুলো এনকোড করে, যা ৪জি এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। ৫জি নেটওয়ার্ক তরঙ্গদৈর্ঘ্য স্পেকট্রামের একাধিক ব্যান্ড (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি) থেকে নির্মিত। এতে মধ্য ও উচ্চ-স্পেকট্রাম পরিসরের নতুন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড রয়েছে। যা বিদ্যমান ফ্রিকোয়েন্সিগুলোর সঙ্গে মিলিত হয়ে ৫জি নেটওয়ার্ক তৈরি করে।

 

৫জি কত দ্রুত কাজ করে?

পঞ্চম প্রজন্মের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ৫জির প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কল্যাণে ব্যবহারকারীরা ৪জির তুলনায় ডেটা স্থানান্তরের জন্য অনেক দ্রুতগতির ইন্টারনেটসেবা উপভোগ করতে পারে। অনুকূল পরিস্থিতিতে ৫জি প্রতি সেকেন্ডে ২০জিবিপিএস পর্যন্ত সর্বোচ্চ ডাউনলোড এবং ১০জিবিপিএস পর্যন্ত আপলোড করতে পারে। আর ল্যাটেন্সিও কয়েক মিলিসেকেন্ডে কমিয়ে দেয়, যা ডিভাইসে ডেটা পৌঁছানোর জন্য নেটওয়ার্কজুড়ে ডেটা ভ্রমণের সময়কে পাঁচগুণ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। তবে এসব সুবিধা কিংবা হার- অবস্থান, নেটওয়ার্ক প্রদানকারী (অপারেটর) এবং ডিভাইসের ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। ৫জি নতুন রেডিও স্পেকট্রামে প্রসারিত করে নেটওয়ার্কের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।

 

৫জির ফ্রিকোয়েন্সি কত?

৫জি লো-ব্যান্ড (১ গিগাহার্টজের নিচে ফ্রিকোয়েন্সি), মিড-রেঞ্জ ব্যান্ড (১ থেকে ৬ গিগাহার্টজ) এবং নতুন হাই-ব্যান্ড স্পেকট্রাম (২৪.২৫ থেকে ৮৬ গিগাহার্টজ) কভার করে। সর্বোচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি হলো মিলিমিটার-ওয়েভ (mmWave), যা দ্রুততম গতি সরবরাহ করে।

 

৫জি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

♦ ডেটা স্থানান্তরের জন্য ৫জি এর গতি জীবনকে অনেক উপায়ে সহজ করে তোলে।

♦ দূরবর্তী অফিসেও একই স্তরের কর্মক্ষমতা পাবে, সংযোগে কোনো বিলম্ব ছাড়াই।

♦ গ্রামীণ এলাকায় ৫জি ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাক্সেস (FWA) সংযোগ উন্নত করবে।

♦ ৫জি ক্লাউড পরিষেবাগুলোতে প্রায় তাৎক্ষণিক অ্যাক্সেস এবং রিয়েল-টাইম ভিডিও অনুবাদের মতো জিনিসগুলোর অনুমতি দেয়।

♦ ৫জি সেলুলার এবং ওয়াইফাই অ্যাক্সেসে নির্বিঘ্ন ওপেন রোমিং ক্ষমতা প্রদান করে।

স্বাস্থ্যসেবায় ৫জি রোগীদের রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণে সক্ষম, ফলে ডাক্তারদের দ্রুত রোগ নির্ণয়, রোবোটিক সার্জারি নিরাপদ করবে।

♦ ৫জি পূর্ববর্তী মোবাইল প্রজন্মগুলোর চেয়ে বেশি শক্তি-দক্ষ, কারণ এটি নেটওয়ার্কের বিদ্যুৎ খরচ হ্রাস করে। ফলে ডিভাইসের ব্যাটারির আয়ুষ্কাল বাড়তে পারে।

♦ ৫জি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সুরক্ষিত মোবাইল নেটওয়ার্ক, তবে যারা অতিরিক্ত গোপনীয়তা চান তারা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ৫জি নেটওয়ার্ক সেট আপ করে নিতে পারেন।

♦ ৫জি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR), IoT (ইন্টারনেট অব থিংস), এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তির বিকাশে নতুন সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে।

তথ্যসূত্র : ভোনেজ

তথ্য প্রুযুক্তি শীর্ষ সংবাদ