বিশেষ প্রতিবেদক
অনিয়ম, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকতে থাকা ৯টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে অক্ষমতা, উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতি—এই তিন সূচককে ভিত্তি ধরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘অপরিচালনযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
বৃহস্পতিবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩ অনুযায়ী অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দেওয়া হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য রেজুলেশন বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, অবসায়নের সময় ক্ষুদ্র আমানতকারীদের জমা টাকা ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের চাকরিবিধি অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
বন্ধ হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
আভিভা ফাইন্যান্স
এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)
প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স
জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি
প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড
বিপুল খেলাপি ঋণ ও লোকসান
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ ঋণই খেলাপি।
এফএএস ফাইন্যান্স: মোট ঋণের ৯৯.৯৩% খেলাপি, লোকসান ১,৭১৯ কোটি টাকা।
ফারইস্ট ফাইন্যান্স: ৯৮% ঋণ খেলাপি, লোকসান ১,০১৭ কোটি টাকা।
বিআইএফসি: খেলাপি ঋণ ৯৭.৩০%, লোকসান ১,৪৮০ কোটি টাকা।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং: খেলাপি ঋণ ৩,৯৭৫ কোটি টাকা (৯৬%), লোকসান ৪,২১৯ কোটি টাকা।
পিপলস লিজিং: খেলাপি ঋণ ৯৫%, লোকসান ৪,৬২৮ কোটি টাকা।
আভিভা ফাইন্যান্স: খেলাপি ঋণ ৮৩%, লোকসান ৩,৮০৩ কোটি টাকা।
প্রিমিয়ার লিজিং: খেলাপি ঋণ ৭৫%, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা।
জিএসপি ফাইন্যান্স: খেলাপি ঋণ ৫৯%, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা।
প্রাইম ফাইন্যান্স: খেলাপি ঋণ ৭৮%, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
আর্থিক খাতে সামগ্রিক চিত্র
বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে ২০টিকে সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণ ২৫,৮০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২১,৪৬২ কোটি টাকা (৮৩.১৬%) খেলাপি।
অন্যদিকে, তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকা ১৫ প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার মাত্র ৭.৩১%। তারা গত বছর ১,৪৬৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে এবং তাদের মূলধন উদ্বৃত্ত ৬,১৮৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বর্তমানে মোট আমানতের পরিমাণ ৪৮,৯৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ২০ প্রতিষ্ঠানের আমানত ২২,১২৭ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্রাহকদের নিট ব্যক্তি আমানতের পরিমাণ প্রায় ৪,৯৭১ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, অবসায়ন ও পুনর্গঠনের প্রাথমিক ধাপে এই অর্থের জোগান দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে।