নিজস্ব প্রতিবেদক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার কমিশনের বৈঠকে এই কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেন।
এদিকে গতকালই সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ইসির খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তির শুনানি শেষ হয়েছে।
ইসি সচিবালয় জানায়, টানা চার দিনে ৩৩টি জেলার ৮৪টি আসনের সর্বমোট এক হাজার ৮৯৩টি দাবি-আপত্তির ওপর ইসি শুনানি গ্রহণ করে। ইসির প্রস্তাবের বিপক্ষে এক হাজার ১৮৫টি এবং পক্ষে ৭০৮টি পরামর্শমূলক আবেদনের শুনানি হয়।
নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে গতকাল ইসি সচিব বলেন, ‘আমরা যে কর্মপরিকল্পনা করেছি, সে কর্মপরিকল্পনা আপনাদের জানাব। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি।
এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন।’
এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, কর্মপরিকল্পনার সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।
২০০৭-০৮ সাল থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের রেওয়াজ চলে আসছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রোডম্যাপ প্রকাশ করে তৎকালীন ইসি। বর্তমান ইসিও এ ধরাবাহিকতা বজায় রাখছে।
বর্তমান ইসি ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ভোট ধরে একটি প্রথমিক কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছিল। পরে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ভোটের সময়সীমা নির্ধারণ হওয়ার পর নতুন সময় ধরে কর্মপরিকল্পনাটি পরিমার্জন করা হয়।
ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা ও সাম্ভাব্য সময়সীমা উল্লেখ থাকছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের জন্য এক মাস সময় রাখা হচ্ছে। অক্টোবরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত ভোটার হালনাগাদের খসড়া তালিকা ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত হবে। এরপর আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করে সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন দিয়ে এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে। নির্বাচনী আইন সংস্কার; ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত করা; নির্বাচনী প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করার সময়সীমা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময়—এসব কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ থাকবে।
আসনবিন্যাস চায় পাবনা, আগের আসন পুনর্বহাল চায় সিরাজগঞ্জ : এদিকে সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গতকালের শুনানিতে পাবনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের দাবি ওঠে। আর সিরাজগঞ্জবাসী আগের আসন পুনর্বহালের দাবি জানায়। পাবনার প্রতিনিধি জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, ‘বর্তমানে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে পাবনা-১ আসন রয়েছে। বেড়া উপজেলার অপরাংশ ও সুজানগর উপজেলা নিয়ে পাবনা-২ আসন রয়েছে। আমরা শুধু সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে পাবনা-১ আসন চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘একই সঙ্গে বেড়া ও সুজানগর নিয়ে পাবনা-২ আসন চাই। এই দুটি আসন বিন্যাসের প্রস্তাব ২০১৮ সালেও ছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সিরাজগঞ্জের প্রতিনিধি আবদুল মান্নান বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ জেলায় ২০০১ সাল পর্যন্ত সাতটি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসন কমিয়ে ছয়টি আসন করা হয়। আমাদের দাবি, আগে চৌহালী উপজেলা ও শাহজাদপুর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চারটি ইউনিয়ন মিলে যে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন ছিল তা আমরা ফিরে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বর্তমানে বেলকুচি ও চৌহালী নিয়ে যে আসনে আছি এই আসনে আমরা থাকতে চাই না। দুর্গম ও নদীভাঙন এলাকা হিসেবে আমাদের একটিই দাবি, আমরা আগের আসনে ফিরে যেতে চাই।’