আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় রক্ত ঝরছে প্রতিদিনই। সর্বশেষ দখলদারদের বোমায় সোমবারেই প্রাণ গেছে অন্তত ৫৯ ফিলিস্তিনির।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক গর্ভবতী নারী ও তার অনাগত শিশু।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটিতে ইসরায়েলি সেনারা শাতি শরণার্থী শিবিরের কাছে ব্যাপক অভিযান চালায়। সেখানে এক গর্ভবতী নারী ও তার অনাগত শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। একই হামলায় আরও এক শিশুও প্রাণ হারিয়েছে। স্থানীয় সংবাদ সংস্থা ওয়াফা ও আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুধু তাই নয়, গাজার দক্ষিণাংশে জায়তুন ও সাবরা এলাকায়ও ভয়াবহ বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। গত এক মাস ধরে চলা অভিযানে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে সেনারা।
দিনের শুরুতেই নাসের স্ট্রিটের ব্যস্ত বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আল জাজিরার সাংবাদিক মোয়াথ আল-খালুত জানান, বাজারে হঠাৎ বিমান হামলায় চারজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। তিনি বলেন, মানুষ জানে না কোথায় যাবে, কোথায় আশ্রয় নেবে। শহরের প্রতিটি কোণায়ই হামলা চলছে।
এছাড়া দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-মাজরা স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদেরও টার্গেট করে হামলা চালানো হয়। আল-আকসা মার্টিয়ার্স হাসপাতাল পরে আনাস সাঈদ আবু মুগসিব নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
যুদ্ধের পাশাপাশি গাজায় এখন প্রকট হয়ে উঠেছে দুর্ভিক্ষ। জাতিসংঘ একে ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ আখ্যা দিয়েছে। সোমবার খাদ্যসংকটে আরও তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এ পর্যন্ত ক্ষুধা ও অনাহারে প্রায় ৩৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে গাজায় যে মানবিক সহায়তা ঢুকছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ।
তবু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গত আগস্টে জাতিসংঘ সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন সংস্থার (আইপিসি) দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করে একে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ দাবি করেছিলেন।
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সোমবার এ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইসরায়েলের সহায়তা আটকে রাখা ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’। তার ভাষায়, এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, একবিংশ শতাব্দীতে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। আরও মৃত্যু ঠেকাতে এখনই জরুরি মানবিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি অবিলম্বে গাজায় আটকে থাকা খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান