ইসির সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

ইসির সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

 

ভোটার আস্থা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও আইনশৃঙ্খলা
দেড় লাখ পুলিশ ও ৬০ হাজার সেনা সদস্য দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত
রাজনৈতিক দল ও আন্তর্জাতিক মহল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচনি প্রস্তুতি
নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজানের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে— এমনটাই ধরে নিয়ে দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার আগেই নভেম্বরের মধ্যে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। তবে এই নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট আয়োজনের জন্য ইসির সামনে রয়েছে একাধিক জটিলতা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারের নির্বাচনে কমিশনের সামনে দাঁড়িয়েছে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ— ভোটার আস্থা ফিরিয়ে আনা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ।

পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো নিয়ে জনগণের মধ্যে যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে চায় বর্তমান কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশন নিরপেক্ষতার বার্তা দিচ্ছে।

তারা মনে করে, স্বচ্ছ ও ন্যায্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভোটারদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ ও মতামত গ্রহণ করা হবে।

সব দলের জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল সমানভাবে প্রচারণা চালাতে পারবে এবং ভোটাররাও নিরপেক্ষ পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন। ইসির একাধিক কমিশনার জানিয়েছেন, আইন প্রয়োগ ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘর্ষ এবং ভিন্নমতের ওপর হামলার কারণে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গণসংহতি আন্দোলন ও এবি পার্টির নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, সরকারের কার্যক্রমে সমন্বয়ের অভাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।

সম্প্রতি ঘোষিত রোডম্যাপে ২৪টি কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা অনুমোদন ইত্যাদি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এক কোটি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজও শুরু করেছে ইসি। বিভিন্ন গ্রুপে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোট প্রদানের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে শিগগিরই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেরও আগ্রহ রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, কালো টাকা, ষড়যন্ত্র তত্ত্বসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার প্রতিরোধ, রাজনৈতিক পক্ষপাতহীনভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগানো এবং বেহাত হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার। একই সঙ্গে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে ৬০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন থেকেই ঝুঁকি চিহ্নিত করে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। ড. আবদুল আলিম বলেন, আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ। যদি এখন থেকেই সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তাহলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ