ডা. এ. হাসনাত শাহীন
ডায়াবেটিস হলো একটি বিপাকজনিত রোগ, যেখানে রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। আমাদের শরীরের অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। ইনসুলিন গ্লুকোজকে শরীরের কোষগুলোতে পৌঁছে দেয়, যা থেকে কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। এই শক্তি দিয়েই আমরা প্রতিদিনের কাজ করি। যখন গ্লুকোজ কোষে পৌঁছাতে পারে না, তখন দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ইনসুলিনের আংশিক বা সম্পূর্ণ ঘাটতি হলে অথবা এর কার্যকারিতা কমে গেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে।
ডায়াবেটিসের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া;
অতিরিক্ত তেষ্টা পাওয়া;
নিয়মিত খাওয়ার পরও ঘন ঘন খিদে পাওয়া;
অত্যধিক ক্লান্তি অনুভব করা;
চোখে ঝাপসা দেখা;
শরীরের কোথাও কেটে গেলে সহজে না শুকানো;
কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া;
বারবার প্রদাহজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া;
হাতে-পায়ে ব্যথা বা অবশ হয়ে যাওয়া।
অনেক ক্ষেত্রে এই লক্ষণ সব সময় নাও থাকতে পারে। প্রতি দুজন ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে একজন জানেনই না যে তিনি এই রোগে আক্রান্ত। এটি খুবই বিপজ্জনক, কারণ ডায়াবেটিসের জটিলতা রোগের শুরু থেকেই শুরু হতে পারে। সময়মতো রোগ নির্ণয় করা ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও জটিলতা প্রতিরোধের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লক্ষণ না থাকলেও যাদের ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো উচিত:
যাদের বয়স ৪৫ বা তার বেশি;
যারা স্থূল (মোটা);
যাদের নিকটাত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে;
যাদের শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি আছে;
যাদের প্রি-ডায়াবেটিস আছে;
যেসব নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অথবা বেশি ওজনের সন্তান প্রসবের ইতিহাস আছে;
যাদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আছে;
যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোকের পূর্ব ইতিহাস আছে;
যাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি এবং এইচডিএলের মাত্রা কম।
এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীদের যদি সময়মতো ডায়াবেটিস নির্ণয় না হয়, তাহলে বেশি ওজনের শিশু জন্মদান, অকাল গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, প্রসব-পরবর্তী শিশুমৃত্যু, জন্মগত ত্রুটি বা প্রসব-পরবর্তী মা ও শিশুর বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রথম চেকআপের সময় অথবা গর্ভধারণের ২৪-২৮ সপ্তাহে প্রত্যেক অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করানো উচিত।
লেখক: কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা