আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রার্থনা করতে গিয়ে গত সপ্তাহে নিখোঁজ হয়েছিলেন একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক। এরপরই গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী গ্রেস জিন ড্রেক্সেল চীনে বসবাসকারী তার বাবা, ধর্মযাজক জিন মিংগ্রির কাছ থেকে একটি বার্তা পান। ছেলেকে নিখোঁজ ধর্মযাজকের জন্য প্রার্থনা করতে বলেছিলেন জিন মিংগ্রি।
এর কিছুক্ষণ পরেই, আমার মায়ের কাছ থেকে ফোন আসে। মা জানান যে তিনি আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না, বিবিসিকে বলেন জিন ড্রেক্সেল।
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার পরিবার বুঝতে পারে যে জিনও ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন, যাকে কয়েক দশকের মধ্যে চীনে খ্রিষ্টান ধর্মের মানুষদের সবচেয়ে বড় গ্রেপ্তার বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
কেউ কেউ এমন আশঙ্কাও করছেন যে, গেল এক সপ্তাহের মধ্যে জিনের প্রতিষ্ঠিত জিওন চার্চ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ৩০ জন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা, গোপনভাবে কর্মকাণ্ড চালানো গির্জাগুলোর ওপর আরও ব্যাপক দমন-পীড়নের সূচনা করতে পারে।
এক্ষেত্রে চীনে পাস হওয়া নতুন আইনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, এই আইন গির্জার গোপন কার্যকলাপ বন্ধ করতে এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গির্জার সদস্যদের ওপর কর্তৃপক্ষের চাপ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।
নাস্তিক চীনা কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও, চীনে উল্লেখযোগ্য খ্রিষ্টান জনসংখ্যা রয়েছে। সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ প্রোটেস্ট্যান্ট এবং প্রায় ৬০ লাখ ক্যাথলিক বসবাস করছেন দেশটিতে।
কিন্তু এই পরিসংখ্যানগুলো কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত ক্যাথলিক প্যাট্রিয়টিক অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রোটেস্ট্যান্ট থ্রি-সেল্ফ প্যাট্রিয়টিক মুভমেন্টের সঙ্গে নিবন্ধিত গির্জার সদস্যদের, যারা চীন এবং কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি অনুগত থেকেই কার্যক্রম চালায়।
অধিকার কর্মীদের অনুমান, আরও লাখ লাখ চীনা নাগরিক অনিবন্ধিত গির্জাগুলোতে প্রার্থনা করে, যা হাউস গির্জা নামেও পরিচিত এবং রাষ্ট্র-অনুমোদিত মতাদর্শ অনুসরণ করে না।
বছরের পর বছর ধরে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে চীনা সরকার। অনেক গির্জাই যাতে প্রভাবিত হয়েছে।
গির্জা ভবনগুলো ভেঙে ফেলার পাশাপাশি জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ক্রুশও সরিয়ে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ধর্মীয় নানা কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, এমনকি চীনে কিছু খ্রিষ্টান অ্যাপও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গির্জার তথ্য অনুসারে, গুয়াংজি প্রদেশের বেইহাই শহরে তার প্রধান ঘাঁটি থেকে জিনকে ধরে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও অন্যান্য যাজক, নেতা এবং ধর্মসভার সদস্যদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে।
জিনের জন্য বেইহাইয়ের পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর জারি করা একটি সরকারি আটক নোটিশের অনুলিপি পেয়েছে বিবিসি। যেখানে বলা হয়েছে যে, জিন বর্তমানে বেইহাইয়ের দুই নম্বর কারাগারে বন্দী এবং তাকে “তথ্য নেটওয়ার্কের অবৈধ ব্যবহার” করার অভিযোগে সন্দেহ করা হচ্ছে।
খ্রিষ্টান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ লুক অ্যালায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা কোরি জ্যাকসন বলছেন, চীনজুড়ে গ্রেফতারের ঘটনা অভূতপূর্ব।
আমরা ধারণা করছি এটি একটি বৃহত্তর অভিযানের মাত্র শুরু, তিনি বলেন, গোপনে পরিচালিত চীনের অন্যান্য গির্জাও এখন গ্রেফতারের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে।
আরেকটি খ্রিষ্টান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ, ওপেন ডোরস, জানিয়েছে যে গ্রেফতারগুলো তাৎপর্যপূর্ণ।
“জিওন চার্চ খুব সুপরিচিত এবং স্পষ্টভাষী ছিল এবং এটি সম্ভবত সংগঠনের এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে,” একজন মুখপাত্র বলেছেন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, চীনের গির্জার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নীতি অব্যাহত থাকবে এবং কর্তৃপক্ষ “ভয় দেখানোর কৌশল হিসাবে” গির্জার আরও সদস্যদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অর্থনৈতিক অপরাধের অভিযোগও আনতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত জিওন চার্চের একজন যাজক এবং মুখপাত্র শন লং বলেছেন, চীনজুড়ে দ্রুত ধর্মীয় নিপীড়নের একটি নতুন ঢেউ উঠছে, অন্যান্য গির্জাগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে লন্ডনে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যে চীনা নাগরিকরা আইন অনুসারে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা উপভোগ করেন। তবে, সমস্ত ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধর্মীয় কার্যকলাপে চীনের আইন ও বিধি মেনে চলতে হবে।
এই সপ্তাহের শুরুতে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন যে তারা তথাকথিত ধর্মীয় বিষয়গুলোতে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন হস্তক্ষেপের দৃঢ় বিরোধিতা করে।