হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে এই কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিটির দায়িত্ব হবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা।
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টাফ অফিসার (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জানান, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—জোন-৩ এর উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল মন্নান, কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নাহিদ মামুন, ঢাকা-১৯ অঞ্চলের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর মো. তোজাম্মেল হোসেন এবং কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন।
কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডস্থল অবিলম্বে পরিদর্শনের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করতে বলা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যেখানে পণ্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদামঘর ও সংলগ্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালায়। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে, তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি।
ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করে। প্রাথমিকভাবে আগুনে পুড়ে যাওয়া পণ্যের প্রকৃতি ও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত কমিটির দায়িত্বের মধ্যে থাকবে—
-
অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ নির্ণয়,
-
ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রণয়ন,
-
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি চিহ্নিতকরণ, এবং
-
ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর সুপারিশ প্রদান।
শাহজালাল বিমানবন্দর দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার এবং কার্গো ভিলেজ দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র। ফলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুধু ভৌত অবকাঠামোর ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার সময় কার্গো অপারেশনের কার্যক্রম সীমিত সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয় এবং পরে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের এই তদন্ত কমিটি যদি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় গাফিলতির প্রমাণ পায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করবে বলে জানা গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হবে। এর ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা পরিকল্পনা এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।