বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষা কার্যক্রমে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের অনুদান দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ইউএনএইচসিআর ঢাকা অফিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই অর্থ মূলত শরণার্থীদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সহায়তায় ব্যয় করা হবে। এর আওতায় প্রতিবন্ধীদের অন্তর্ভুক্তি, সুরক্ষা কার্যক্রম এবং রন্ধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত এলপিজি সরবরাহ জোরদার করা হবে।
প্রতিবন্ধী শরণার্থীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ
অনুদানটির উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করা হবে প্রতিবন্ধী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাহিদা পূরণে। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, এই অর্থের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, পুনর্বাসন সহায়তা, সহায়ক যন্ত্র সরবরাহ, মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া, চলাচলে সুবিধাজনকভাবে গোসলখানা ও শৌচাগার নির্মাণের মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠীর জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা হবে।
রান্নার জ্বালানিতে নিরাপদ এলপিজি
অনুদানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যবহৃত হবে শরণার্থী শিবিরে রান্নার জন্য তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সরবরাহে। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শিবিরে এলপিজির নিয়মিত সরবরাহ শরণার্থীদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এলপিজি ব্যবহারের ফলে নারীদের ও কিশোরীদের জ্বালানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণভাবে বনাঞ্চলে যাওয়ার প্রয়োজন কমে গেছে, ফলে তারা অনেক বেশি নিরাপদ থাকছে। পাশাপাশি শিশুদের পড়ালেখার সময় বেড়েছে এবং শিবির ও আশপাশের পরিবেশগত ক্ষতি হ্রাস পেয়েছে।
ইউএনএইচসিআরের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ইভো ফ্রেইসেন এক বিবৃতিতে বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে যারা বিভিন্ন শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতার মুখে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার এ সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, “জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে তীব্র অর্থনৈতিক ঘাটতির মধ্যেও দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ ও সরকারের এই উদার সহযোগিতা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় সহায়ক হবে।”
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে।
এই জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক দাতা দেশগুলো সমন্বয়ে কাজ করছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থায়নে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় জরুরি সেবাদানে ব্যাঘাত ঘটছে। এ প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ার এই সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ বলেই বিবেচিত হচ্ছে।