ইউক্রেনের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ ট্রাম্পের

ইউক্রেনের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি ইউক্রেনের সম্ভাবনা নিয়ে মিশ্র মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “তারা (ইউক্রেন) জিততে পারত। আমার মনে হয় না, তারা পারবে; কিন্তু তারা চাইলে এখনও তা সম্ভব।” ট্রাম্প আরও বলেন, “যুদ্ধ অত্যন্ত জটিল ও অনিশ্চয়তায় ভরা একটি বিষয়। এখানে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে, কিছু ভালো কিছু খারাপও।”

ট্রাম্পের এ মন্তব্য যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের ওপর তার জোরার প্রমাণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যদিও তিনি একদিকে ইউক্রেনের জয়ের সম্ভাবনা অস্বীকার করেন, অন্যদিকে আবার তাদের সক্ষমতা থাকার কথাও বলেন— যা তার অবস্থানে দ্বৈততা নির্দেশ করে।

বেসামরিক এলাকায় হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য
সাংবাদিকরা রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে কি না— এমন প্রশ্ন করলে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, হামলা হচ্ছে। তবে নিহতদের সবাই সামরিক সদস্য।” তিনি দাবি করেন, “প্রতি সপ্তাহে দুই পক্ষেরই ৫ থেকে ৭ হাজার সেনা প্রাণ হারাচ্ছে।”

তবে ট্রাম্পের এ বক্তব্য স্বাধীন কোনো উৎস থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রবাহ সীমিত এবং পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ায় এ ধরনের মন্তব্য অনেক সময় বিতর্কের জন্ম দেয়।

যুদ্ধ বন্ধে অগ্রাধিকার ও পূর্ববর্তী বৈঠকসমূহ
ট্রাম্প এর আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত সমাধানকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পর বিষয়টি নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানা গেছে, ট্রাম্প এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। গত আগস্টে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত যুদ্ধের মীমাংসা বা উল্লেখযোগ্য কোনো কূটনৈতিক অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।

পরস্পরবিরোধী মন্তব্য ও ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব
যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলোতে পরস্পরবিরোধিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত মাসে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, “রুশ বাহিনী ইউক্রেনের যেসব এলাকা দখল করেছে, কিয়েভ সেগুলো পুনরুদ্ধার করবে।”

তবে চলতি সপ্তাহে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ইউক্রেনকে তার ভূখণ্ডের কিছু অংশ ছেড়ে দিতেই হবে। পুতিন কিছু না কিছু দাবি করবেই। তারা লড়াই করেছে এবং কিছু অংশ জয় করেছে, এটাই বাস্তবতা।” তার এই মন্তব্য কিয়েভের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

আসন্ন বৈঠকের পরিকল্পনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আরেকটি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৈঠকের সময় ও এজেন্ডা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপ এবং বিশ্বের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন এবং সামরিক সহায়তা সত্ত্বেও ইউক্রেনের সামনে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে রুশ বাহিনী দোনেৎস্ক, লুহানস্কসহ পূর্ব ইউক্রেনের কিছু অংশে তাদের উপস্থিতি সুসংহত করেছে।

এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের মন্তব্য কেবল মার্কিন নীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার ইঙ্গিতই দেয় না, বরং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তি ও এর কূটনৈতিক রূপরেখা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অবস্থান সম্পর্কে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও তিনি যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে জোর দিয়েছেন, তবু তার পরস্পরবিরোধী মন্তব্য এবং ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার পরামর্শ ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।

সূত্র: আরটি

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ