ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পুঁজিবাজারের মূল্যসূচকগুলি আবারও নিম্নমুখী হয়েছে। একদিনের বিরতির পর বাজারে দরপতন বেড়ে গেছে, যেখানে দরপতনের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রধান সূচকও কমেছে। তবে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবগুলো মূল্যসূচক বেড়েছে, যদিও সেখানে অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন এবং লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
ডিএসইতে মঙ্গলবার মোট ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনের আওতায় এসেছে। এর মধ্যে দর বাড়েছে ৮০টির, কমেছে ২৪১টির, এবং ৭২টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। দরপতন হওয়া শেয়ারগুলোর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ১৫৩টি, ‘বি’ ক্যাটাগরির ৫০টি, এবং ‘জেড’ ক্যাটাগরির ৩৮টি শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে।
দরপতনের কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। গতকাল সূচকটি ছিল ৫ হাজার ১১২ পয়েন্ট। অন্যদিকে, শরিয়াহ কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএসইএস ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। ডিএসই-৩০ সূচক, যা দেশের শীর্ষ ৩০ কোম্পানির শেয়ার মূল্য নির্দেশ করে, ৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
লেনদেনের পরিমাণ বাড়লেও দরপতন বৃদ্ধি পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ দিক। মঙ্গলবার ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ১ লাখ টাকা, যা আগের দিনের ৩৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকার তুলনায় ৮৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেশি।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মঙ্গলবার সবগুলো মূল্যসূচক বৃদ্ধি পেয়েছে। সিএসইর প্রধান সূচক সিএসপিআই ২০ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৩০৩ পয়েন্টে, এবং সিএসসিএক্স সূচক ১৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার ৮১০ পয়েন্টে উঠেছে। তবে এখানে মোট ২০৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়, যার মধ্যে ৮৪টির দর বেড়েছে, ৯২টির দর কমেছে এবং ২৯টির দর অপরিবর্তিত ছিল। সার্বিক লেনদেনের পরিমাণ ১২ কোটি ২৩ লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ ছিল, যা আগের দিনের ১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার থেকে কম।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের পুঁজিবাজারের চলমান অবস্থা অর্থনীতির জন্য সতর্কতামূলক সংকেত হতে পারে। বাজারে দরপতন ও বিনিয়োগকারীর আস্থা কমে যাওয়া আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতির নানা খাতকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষত, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারের দরপতন এবং লেনদেনের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহিত হওয়ার কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাংক ও এনবিএফআই খাতের লেনদেনের প্রভাব বাজারে কিছুটা উত্থান সৃষ্টি করলেও, সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন এবং আইপিও তহবিল ব্যবহারে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা পুঁজিবাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ, বাজারের সুস্থতা নিশ্চিতকরণ এবং নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব পাচ্ছে।