মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে অবিশ্বাস্য হারে স্বপ্নভঙ্গ, সেমিফাইনাল পথ বন্ধ

মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে অবিশ্বাস্য হারে স্বপ্নভঙ্গ, সেমিফাইনাল পথ বন্ধ

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে দারুণ এক সূচনা করলেও পরবর্তী তিন ম্যাচে স্বপ্ন পূরণের পথে বড় বাধার মুখে পড়েছে। টানা চার ম্যাচে পরাজয়ের ফলে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নও থেকে গেল দূরে। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ১৭৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৫ ওভারের মধ্যে মাত্র ২৭ রান করা বাকি থাকার পর শেষ পর্যন্ত ৭ রানে পরাজিত হওয়ায় টাইগ্রেসদের হতাশা গভীর।

ম্যাচের শেষদিকে দলীয় স্কোরবোর্ডে মাত্র ১ রান যোগ করতেই ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলের জন্য নিশ্চিত জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি চাপ সামলাতে ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, “আমরা এমন তিনটি ম্যাচ হারিয়েছি যা হৃদয়বিদারক। নির্দিষ্ট মুহূর্তে আমরা নিজেদের পরিকল্পনার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি এবং নিয়মিত উইকেট হারানোর পাশাপাশি স্নায়ুর চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়েছি।”

বাংলাদেশের মেয়েরা ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে দ্রুত উইকেট তুলে নেওয়ার পর জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। ইংল্যান্ডের কাছে হিদার নাইটের ব্যাটিংয়ে হারতে হয়েছে, আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একাধিক ক্যাচ ফেলে দেয়ায় ম্যাচ শেষ ওভারে হারায় বাংলাদেশ। এই তিন ম্যাচের পর তিরে গিয়ে তরী ডোবার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জ্যোতি বলেন, “অন্যান্য দলের খেলোয়াড়রা শেষ মুহূর্তে স্নায়ু ধরে রেখে চাপ সামলায়, কিন্তু আমরা তা পারিনি। এই চাপ নেওয়ার বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে।”

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই ৪৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু জ্যোতি ও শারমিন সুপ্তা ৮২ রানের জুটি গড়ে দলের মোমেন্টাম ফিরে আনেন। এরপর পায়ের ক্র্যাম্পের কারণে সুপ্তাকে মাঠ ছাড়তে হয়, যা ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়। জ্যোতি বলেন, “আমরা শুরু থেকে ভালো খেলছিলাম এবং এটি আমাদের ম্যাচ ছিল। কিন্তু সুপ্তার মাঠ ছাড়ার পর মোমেন্টাম কিছুটা বদলে যায়।”

শারমিন সুপ্তার বিদায়ের পর অধিনায়ক জ্যোতি স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ৫০ রানের জুটি গড়েন। তবে দ্রুত উইকেট হারানোর কারণে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। জ্যোতি আরও জানান, “স্বর্ণার আগমনে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট হারানোর কারণে রান তাড়া করা কঠিন হয়ে পড়ে।”

বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপে এখন আর একটি ম্যাচ বাকি আছে, যেখানে ভারতের বিপক্ষে খেলতে হবে। কিন্তু ৬ ম্যাচে ৫ হার এবং মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে তাদের সেমিফাইনালের সুযোগ শূন্য বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স তাদের ক্রিকেট উন্নয়নের জন্য মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দলের যুবক ক্রিকেটারদের মধ্যে থাকা প্রতিভা সত্ত্বেও অভিজ্ঞতা এবং চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে যে ঘাটতি রয়েছে, তা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালীন এসব ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্রিকেট বোর্ড ও কোচিং স্টাফদের কাছ থেকে ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণের প্রত্যাশা রয়েছে, যা দলের সামগ্রিক সক্ষমতা ও মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

খেলাধূলা শীর্ষ সংবাদ