নির্বাচন কমিশনার ইউএনওদের কঠোর নির্দেশ: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

নির্বাচন কমিশনার ইউএনওদের কঠোর নির্দেশ: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের (ইউএনও) প্রতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিণতিযুক্ত নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। ইউএনওদের প্রতি দায়িত্বশীল, সৎ এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে তারা এ নির্দেশনা দেন।

এদিন আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইউএনওদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কনসিকন্সিয়াল’ বা গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি বহনকারী নির্বাচন হবে। তাই, সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের জন্য এই নির্বাচন একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে আসছে। তিনি ইউএনওদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তারা যেন কোনো রাজনৈতিক পক্ষের পক্ষে কাজ না করেন, এবং নিজেদের দায়িত্ববোধ, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন।

এ সময়, নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহও এই আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন, বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে ইউএনওদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে এই সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।”

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, সরকারে থাকা অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের এই পরিস্থিতি কাজে লাগানোর জন্য ইউএনওদের সজাগ থাকতে হবে। তিনি ইউএনওদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আগামী নির্বাচনটি শুধু রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, এটি দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপনকারী একটি সুযোগ।”

এদিকে, ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ইউএনওদের জন্য আরও কঠোর নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসের মধ্যে কিছুটা অস্থিতিশীলতা থাকলেও সরকারি কর্মকর্তাদের এখন আর কোনো ধরনের ভয় বা সংশয় থাকার প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, “যতটা স্বাধীনতা এবং দায়িত্ব এখন পেয়েছি, ততটা অতীতে কখনোই ছিল না।”

সরকারি কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব এবং সততা বজায় রাখতে তাদের প্রতি তিনি বিশেষ নির্দেশনা দেন। “এই নির্বাচনের মাধ্যমে আপনি আপনার সততা এবং নিষ্ঠা প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন,”— যোগ করেন তিনি।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না এবং মোবাইল কোর্টকে আরো কার্যকরভাবে পরিচালিত করতে হবে। “মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে পরিচালিত হতে হবে,” — বলেন তিনি।

ইউএনওদের উদ্দেশ্যে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর তারা যেন সতর্ক থাকেন, কারণ সেই সময়টি গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং এই সময়ের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, দেশজুড়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। “আগামী নির্বাচন সরকারের অধীনে সততা ও নিষ্ঠা প্রদর্শনের একটি সুবর্ণ সুযোগ হতে পারে,” — তিনি বলেন। তার মতে, সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে বিশেষ করে ইউএনওদের ওপর বড় ধরনের দায়িত্ব বর্তাবে এই নির্বাচনে, এবং তারা যদি সঠিকভাবে কাজ করেন, তবে এটি তাদের পেশাদারিত্বের জন্য একটি বড় অর্জন হতে পারে।

এই প্রশিক্ষণ সেশনটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ইউএনওদের নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়েছিল। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ইউএনওদের ওপর একটি বড় দায়িত্ব বর্তাবে, এবং তারা যদি নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন, তবে তা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাবে।

নির্বাচন কমিশনাররা এই উপলক্ষে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী তথ্যের সঠিক প্রচার এবং সব ধরনের নির্বাচনী অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ।

এভাবে, নির্বাচন কমিশন ইউএনওদের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতা ও সততা বজায় রাখতে এবং কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব ছাড়া কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন আশাবাদী যে, ইউএনওরা তাদের দায়িত্বে সফল হতে পারবেন, যা এই নির্বাচনের সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ