বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতে অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইসতিয়াকের আদালত বুধবার (২২ অক্টোবর) শুনানি শেষে এই রায় দেন। এর আগে, মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে এনায়েত করিমকে দুই দফায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকার মিন্টো রোডের মন্ত্রী পাড়ায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় এনায়েত করিম চৌধুরীকে। তাকে একটি প্রাডো গাড়িতে চলাফেরা করতে দেখে পুলিশ তাকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার কাছ থেকে দুইটি আইফোন উদ্ধার করা হয় এবং প্রাথমিক তদন্তে তার ফোন থেকে সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
এনায়েত করিম চৌধুরী পুলিশকে জানায় যে, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক এবং তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য কাজ করছেন। তার বক্তব্যে তিনি জানান, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট এবং বর্তমান সরকারের প্রতি ওই দেশের হতাশা রয়েছে।
এনায়েত করিম চৌধুরী আরও জানায় যে, ২০২৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে কাতার এয়ারওয়েজে ঢাকায় আসার পর থেকে তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তার দাবি, তিনি বাংলাদেশে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং কিছু সরকারি কর্মকর্তার সাথে গোপন বৈঠকও করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনী সমর্থিত নতুন জাতীয় সরকার গঠন করা অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এই নতুন সরকারের জন্য আমেরিকা কীভাবে ভূমিকা নেবে, সেই পরিকল্পনা নিয়েও তার বক্তব্য ছিল।
এনায়েত করিম চৌধুরী অভিযোগ করেন যে, তিনি সরকার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করতেন। তাকে বাংলাদেশে নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রমনা মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে এবং পুলিশ তার সহযোগী গোলাম মোস্তফা আজাদসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন, জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ, সাংবাদিক মো. আজহার আলী সরকার, যুব সংহতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রিফাতুল ইসলাম পাভেল এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা। তারা বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
এনিয়ে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা মো. আখতার মোর্শেদ আদালতে বলেছেন, আসামি এনায়েত করিম চৌধুরী এবং তার সহযোগীরা বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রের প্রতি ক্ষতি সাধনের লক্ষ্যে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে আঁতাত করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আজকের শুনানিতে আসামির আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম রিমান্ড বাতিলের জন্য জামিন আবেদন করলেও আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এর ফলে, আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এনায়েত করিম চৌধুরী এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি। বিশেষ করে, বাংলাদেশে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয়তার অভিযোগটি রাজনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ উন্মোচন করেছে।