মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনালাপে তিনি বাণিজ্য এবং রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, মোদি তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সীমিত করবে।
হোয়াইট হাউসে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প জানান, “আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি, তবে আলোচনার বড় অংশজুড়ে ছিল বাণিজ্য।” তিনি আরও জানান, রুশ তেল আমদানির বিষয়টি উঠে আসার পর মোদি তাকে জানিয়েছেন যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সীমিত করবে।
“তিনি (মোদি) আমাকে বলেছেন যে ভারত খুব বেশি রুশ তেল কিনতে যাচ্ছে না। যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক, সেটা তিনি চান, আর আমি-ও,” মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
বর্তমানে, রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় দুটি ক্রেতা দেশ হলো ভারত এবং চীন। তবে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে তেল কিনতে চাপের মধ্যে পড়েছে ভারত। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চাইলেও, ভারত ডিসকাউন্টে রুশ তেল কিনে আসছে, যার ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ভারতের টেক্সটাইল, ওষুধ এবং গাড়ির যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন রপ্তানিপণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এই শুল্ক বাড়ানোর কারণ হিসেবে ট্রাম্প ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা সীমিত করতে চাপ দিয়ে আসছেন। ট্রাম্প আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “যদি ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ না করে, তাহলে ভারতীয় পণ্যের ওপর ‘বিপুল পরিমাণ শুল্ক’ আরোপ করা হবে।”
ভারত, যা একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে আন্তর্জাতিক কূটনীতি পরিচালনা করে এসেছে, বর্তমানে একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের শক্তিশালী সম্পর্কের কারণে, ভারতকে একদিকে রাশিয়ার তেল কিনতে, অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে।
এছাড়া, ট্রাম্পের এই দাবির পর ভারতীয় শীর্ষ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের হুমকি সম্পর্কে সতর্ক এবং তাদের কৌশল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
এদিকে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে ভারতীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। ভারতের এই পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য নিজেদের কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ: ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভারত আগামী দিনে রাশিয়া থেকে তেল কেনা সীমিত করার জন্য কী পদক্ষেপ নেয়, সেটি বিশ্বমঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠবে। ট্রাম্পের হুমকি এবং শুল্ক বাড়ানোর পটভূমিতে, ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কূটনীতি সম্পর্কিত ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিষয়ে ভারতের সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপই কেবল তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বাণিজ্যিক উন্নয়ন নির্ধারণ করবে।