পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ, খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং আজাদ কাশ্মিরসহ বিভিন্ন অঞ্চল মঙ্গলবার রাতে ৫ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে, যা পাকিস্তানসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় মারাত্মকভাবে অনুভূত হয়েছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের (পিএমডি) অধীন ন্যাশনাল সিসমিক মনিটরিং সেন্টারের বরাতে জানানো হয়, ভূমিকম্পের উৎপত্তি আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পার্বত্য অঞ্চলে, ভূপৃষ্ঠের ২৩৪ কিলোমিটার গভীরে। এটি হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ হিসেবে পরিচিত হিন্দুকুশ পর্বতমালার অন্তর্গত এলাকা, যা ভূমিকম্পের জন্য একটি ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয় অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
ভূমিকম্পের কম্পন পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজধানী ইসলামাবাদ, পেশোয়ার (খাইবার পাখতুনখোয়া), রাওয়ালপিন্ডি, আপার দির, বাজাউর, মালাকান্ড, চিত্রল, মুরি, সামাহনি, ভিমবেরসহ আজাদ কাশ্মিরের বিভিন্ন স্থান।
এছাড়া, ভূমিকম্পটি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকার আরো কিছু শহরেও অনুভূত হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এটি এমন এক সময়ে ঘটলো যখন মাত্র চার দিন আগে পাকিস্তানে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল, যার প্রভাব খাইবার পাখতুনখোয়া, ইসলামাবাদ এবং রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চলে ছিল উল্লেখযোগ্য। এই ভূমিকম্পও ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল, তবে তাতে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি সক্রিয় অঞ্চলে অবস্থান করছে, যেখানে ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ ঘটছে। এই সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্প হওয়া প্রায় নিয়মিত ঘটনা। গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ফলে সেখানে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়।
প্রাথমিকভাবে, ভূমিকম্পের ফলে কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও, সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং বেশ কিছু স্থানে রাস্তাঘাটে জনসমাগম ঘটে। অনেক নাগরিক নিরাপত্তার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় চলে আসেন। স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করে উদ্ধারকাজে নিয়োজিত হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জন্য ভূমিকম্প একটি নিয়মিত দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন অনুসারে, ভবিষ্যতে আরও ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং জনগণকে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া, ভূমিকম্পের পরের দিনগুলোতে এই অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ ভূমিকম্পের ক্ষতিকারক প্রভাবের প্রতিকার করতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।