উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার উপকূলে অভিবাসী বোঝাই একটি নৌকা ডুবে গেলে কমপক্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে, যা দেশটির জন্য এক ভয়াবহ সামুদ্রিক ট্র্যাজেডি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, নৌকাটি ডুবির সময় তিউনিসিয়ার মাহদিয়া উপকূলের কাছে প্রায় ৭০ জন অভিবাসী উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করা হয়েছে, তবে নিখোঁজদের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
রয়টার্সের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই সাব-সাহারান আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। এই দুর্ঘটনা ২০২৫ সালের সবচেয়ে ভয়াবহ সামুদ্রিক দুর্ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বলে জানিয়েছেন তিউনিসিয়ার এক কর্মকর্তা।
এই ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়, কারণ তিউনিসিয়া এখন ইউরোপগামী অভিবাসীদের জন্য একটি প্রধান ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। বহু অভিবাসী যুদ্ধ, দারিদ্র্য, এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে পালিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য তিউনিসিয়াকে ব্যবহার করে।
তিউনিসিয়ার মাহদিয়া উপকূল থেকে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের দূরত্ব মাত্র ১৫০ কিলোমিটার, যা ইউরোপে প্রবেশের প্রথম নোঙর পয়েন্ট হিসেবে অভিবাসীদের কাছে জনপ্রিয়। তবে, ভূমধ্যসাগর পারাপার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপজ্জনক। প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসী এই পথে ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকেই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।
তিউনিসিয়ার মানবাধিকার সংস্থা ফোরাম ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রাইটস (এফটিডিইএস) জানায়, ২০২৪ সালে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী তিউনিসিয়ার উপকূল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন। তবে এই যাত্রা প্রায়ই প্রাণঘাতী হয়ে থাকে, কারণ তিউনিসিয়ার উপকূলে গত বছর (২০২৩) সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় প্রায় ১ হাজার ৩০০ অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া, ২০২৪ সালে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন ৬০০ থেকে ৭০০ অভিবাসী।
এমন এক পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবৈধ অভিবাসন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তিউনিসিয়া সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক আলোচনা ও চুক্তি হয়েছে, কিন্তু তবুও এই ধরনের বিপজ্জনক যাত্রা থামছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, যুদ্ধ এবং দারিদ্র্য থেকে পালানো অনেক মানুষের জন্য ইউরোপে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছে এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ নৌকা যাত্রা। তবে তিউনিসিয়া, ইতালি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে একযোগে কাজ করে এই সংকট মোকাবেলার জন্য আরো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিউনিসিয়ায় অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ এবং সাগরে দুর্ঘটনার এই ধারাবাহিকতা এক নতুন মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ইঙ্গিত করছে, যা একদিকে যেমন রাষ্ট্রগুলোর নীতি নির্ধারণে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে, তেমনি মানবাধিকার এবং নিরাপত্তার এক বড় প্রশ্নও তুলে ধরছে।