ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বাজায়েল স্মোরিচ সৌদি আরব নিয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মাফ চেয়েছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক অনুষ্ঠানে বলেন, “যদি সৌদি আরব স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পরিবর্তে আমাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়, তবে আমি বলব, ‘না ধন্যবাদ’। সৌদির নেতাদের মরুভূমিতে উটে চড়া চালিয়ে যেতে বলছি।”
এই মন্তব্যটি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় এবং সৌদি আরবের প্রতি তার অপমানের জন্য স্মোরিচ প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “সৌদি আরব নিয়ে আমার মন্তব্য ছিল অনুপযুক্ত। আমি তাদের অপমান করার জন্য দুঃখিত।”
অর্থমন্ত্রী স্মোরিচের এমন মন্তব্যের পর দ্রুতই সমালোচনা শুরু হয়, যার ফলে তিনি জনসমক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। “সৌদি আরবের নেতাদের প্রতি আমার মন্তব্য ছিল অত্যন্ত অশোভন। তাদের সম্মানহানির জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত এবং মাফ চাইছি,” বলেন তিনি।
তবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা ও ইসরায়েলের ঐতিহাসিক অধিকার নিয়ে তার অবস্থান আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। স্মোরিচ বলেন, “আমি সৌদি আরব থেকে আশা করব তারা আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পশ্চিমতীরের ইহুদিদের ঐতিহাসিক ভূখণ্ডের অধিকার রক্ষায় হস্তক্ষেপ করবে না। সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সত্যিকারের শান্তি স্থাপন হতে হবে, কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন আমি সমর্থন করি না।”
এরই মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই বছরের মধ্যে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে। ১৫ অক্টোবর টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি মনে করি সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্ক খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। সৌদি নেতৃত্ব এই সম্পর্ক স্থাপন করবে, কারণ সৌদি আরবের গাজা ও ইরান নিয়ে সমস্যা ছিল, কিন্তু বর্তমানে তাদের এই দুটি সমস্যা নেই।”
বাজায়েল স্মোরিচ দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করে আসছেন এবং পশ্চিমতীরসহ ইসরায়েলের ঐতিহাসিক ভূখণ্ডে ইহুদিদের অধিকার রক্ষার পক্ষে তার অবস্থান স্পষ্ট। সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে তার আক্রমণাত্মক মন্তব্য কিছুই বদলাতে পারেনি, বরং এই মন্তব্য সৌদি আরবের প্রতি তার ক্ষোভ ও উত্তেজনা প্রকাশ করেছে।
সৌদি আরব এখনো স্মোরিচের মন্তব্যের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া যদিও এগিয়ে চলছে, তবে এই ধরনের উগ্রপন্থি মন্তব্য ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সৌদি আরব সব সময় ফিলিস্তিনের সমর্থক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে আসছে এবং তাদের একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সক্রিয়।
বাজায়েল স্মোরিচের বিতর্কিত মন্তব্য সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তবে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক তৎপরতার ওপর নির্ভর করবে। যাই হোক, তার মন্তব্যের পর মাফ চাওয়ার পরেও তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে ধারাবাহিকতার প্রতিফলন ঘটেছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মোড় নিতে পারে।


