রোহিঙ্গাদের ঐক্য: ‘ইউনাইটেড কাউন্সিল অব রোহাং’ (ইউসিআর) এর আত্মপ্রকাশ

রোহিঙ্গাদের ঐক্য: ‘ইউনাইটেড কাউন্সিল অব রোহাং’ (ইউসিআর) এর আত্মপ্রকাশ

দীর্ঘ নয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঐক্য ও নেতৃত্বের অভাব ছিল, যা তাদের প্রত্যাবাসনের পথে অন্যতম বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, অবশেষে রোহিঙ্গাদের জন্য গঠন করা হয়েছে একটি ঐতিহাসিক নাগরিক সংগঠন — ‘ইউনাইটেড কাউন্সিল অব রোহাং’ (ইউসিআর), যা তাদের একত্রিত হয়ে একটি সুসংগঠিত, স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, উখিয়ার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউসিআরের শপথ গ্রহণ ও আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। ইউসিআরের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এটি ছিল রোহিঙ্গাদের জন্য প্রথম আনুষ্ঠানিক নাগরিক সংগঠন, যা তাদের বৈধ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে। ৩৩টি ক্যাম্পে ভোটাভুটির মাধ্যমে গঠিত এই সংগঠনটি নিজেদের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করবে। ইউসিআর গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের অনুমতি নিয়ে এবং ভোটাররা ১৪টি শ্রেণি থেকে নির্বাচন করা হয়, যাতে ছিল—ইমাম, মুহতামিম, ছাত্র, শিক্ষক, চেয়ারম্যান, নারী প্রতিনিধি, সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী, কমিউনিটি ডাক্তার, ব্যবসায়ী, যুবক এবং অন্যান্য শ্রেণি।


ইউসিআর তার আত্মপ্রকাশে জানায়, তারা রোহিঙ্গা জনগণের ঐক্য এবং স্বচ্ছ নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে। সংগঠনটির নেতারা আশা করছেন, ইউসিআর রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে নেতৃত্বের একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ইউসিআরের প্রতিনিধিরা জানান, “এটি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে এবং রোহিঙ্গা শিবিরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখবে।” তাদের আশাবাদ, এই সংগঠন রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক এবং টেকসই ভবিষ্যতের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।

এছাড়া, ইউসিআর মনে করে, এই সংগঠন রোহিঙ্গাদের অবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তাদের দাবিগুলি তুলে ধরতে সহায়ক হবে এবং তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


এই সংগঠনের প্রথম নির্বাচিত কংগ্রেসের সদস্যদের শপথ গ্রহণ শেষে, তারা জানায় যে সংগঠনটির সভাপতির নেতৃত্ব প্রতি ৬ মাসে পরিবর্তিত হবে এবং আগামী ৩ বছরের মধ্যে নতুন কংগ্রেস আহ্বান করা হবে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে, যেখানে নির্বাচন পরিচালনাকারী সদস্যরা প্রার্থী হতে পারেননি।

সংগঠনটির নেতারা বিশ্বাস করেন, ইউসিআর রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী নেতৃত্ব এবং সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যা তাদের সংঘবদ্ধ এবং সংগঠিত হয়ে দেশ বা আন্তর্জাতিক স্তরে তাদের অধিকার এবং ভবিষ্যতের জন্য দাবী জানাতে সহায়তা করবে।


ইউসিআরের আত্মপ্রকাশ রোহিঙ্গা জনগণের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি তাদের শরণার্থী ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় ঐক্য এবং একাগ্রতার একটি উদাহরণ হতে পারে, যা তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ