শফিকুর রহমান: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে

শফিকুর রহমান: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান বলেছেন, তাঁর দল যদি দেশের শাসনক্ষমতা লাভ করে, তবে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিবেশী দেশের অস্তিত্বের প্রতি সম্মান জানানো উচিত এবং বাংলাদেশও একই সম্মান প্রত্যাশা করে।

ড. শফিকুর রহমান বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন নিউইয়র্কে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন। তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “ভারত আমাদের চেয়ে আয়তনে অনেক বড়, তাদের জনসংখ্যা ও সম্পদও অনেক বেশি। তবে আমাদের দেশ ও প্রায় ১৮ কোটি মানুষের অস্তিত্বকেও তাদের সম্মান করতে হবে।” জামায়াত আমির আরও বলেন, “যদি প্রতিবেশী দেশ সম্মানজনক আচরণ করে, তবে দুই দেশের সম্পর্ক শুধুমাত্র ভালো থাকবে না, বরং একে অপরের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে সম্মানিত হতে পারবে।”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক কখনোই সহজ ছিল না, তবে দুই দেশই একে অপরের প্রতিবেশী হিসেবে কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আসছে। শফিকুর রহমানের মন্তব্যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যত কেমন হতে পারে, তা নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা হয়েছে। জামায়াতের আমিরের মতে, বাংলাদেশকে ভারতের থেকে কোনো ছাড় নয়, বরং পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “যতদিন পর্যন্ত দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরকে সম্মান করবে না, ততদিন পর্যন্ত সম্পর্কের কোন স্থিতিশীলতা আসবে না।” শফিকুর রহমান দেশের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন এবং বলেছেন যে, “প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিবেশীদের বদলানোর সুযোগ নেই।”

একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান। জামায়াত আমির দাবি করেন, তাদের দল “মেজোরিটি” ও “মাইনরিটি” ধারণায় বিশ্বাস করে না, বরং তারা “ইউনিটি” বা ঐক্যের উপর জোর দেয়। তিনি বলেন, “মেজোরিটি-মাইনরিটি” বলতে কোনো কিছু বুঝায় না; বরং জাতির ঐক্য ও শান্তির জন্য সকল সম্প্রদায়কে একত্রে কাজ করতে হবে।

জামায়াত আমির আরো বলেন, “গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের অভিবাসন ঘটেছে এবং মুসলিমদেরও দেশত্যাগ করতে হয়েছে। আমরা কখনোই কাউকে জোর করে দেশ থেকে তাড়ানোর পক্ষপাতি নই।” তিনি বলেন, “আমরা দেশের ঐতিহ্যগত মিলেমিশে বসবাসের সংস্কৃতির পুনঃপ্রতিষ্ঠান করতে চাই।”

ড. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “আমরা মেজোরিটি বা মাইনরিটি কোনো পক্ষের সমর্থন করি না, বরং ঐক্যবদ্ধ থাকার পক্ষে। আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ভিত্তিতে আমরা যুগযুগ ধরে একে অপরের সঙ্গে বসবাস করে আসছি। আমাদের লক্ষ্য, বিভাজন দূর করে একটি শান্তিপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করা।”

এছাড়া তিনি আরও বলেন, “যদি ৫৪ বছরে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অবৈধভাবে অন্য কারও সম্পত্তি দখল করে থাকে, তবে সেই সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার পক্ষে আমাদের দল অবস্থান নেবে।”

যুক্তরাষ্ট্র সফরের অংশ হিসেবে ড. শফিকুর রহমান কিছু শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে জানান, এই বিষয়ে তিনি আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, “এই সফরের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের সংকট এবং জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি, আমাদের অবস্থান এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্ববাসী আমাদের দলের উদ্দেশ্য এবং বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য আমাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারবে।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমানের বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। তার বক্তব্য, বিশেষ করে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আলোচনাগুলি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামায়াতের এই মন্তব্য জাতি এবং রাষ্ট্রের ঐক্য, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত দেয়।

রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের আসন্ন ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান কি হবে, তা এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়, তবে ড. শফিকুর রহমানের এই মন্তব্য বাংলাদেশে জামায়াতের প্রভাব এবং কার্যক্রমের প্রতি নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ