গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মতি জানিয়েছে। সম্প্রতি কায়রোতে মিসরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর হামাস এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার হামাস তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট সরকারের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে সম্মত হয়েছি। আমরা আশা করছি, এই সরকার গাজার প্রশাসনকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করবে, উপত্যকার বাসিন্দা ফিলিস্তিনিদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব ভাইদের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে।”
গত ২৯ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে একটি ২০ পয়েন্ট সম্বলিত নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা পেশ করেন। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার আওতায়, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মি এবং ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেওয়া, ত্রাণ প্রবাহ শুরু করা এবং গাজায় একটি নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক, অসামরিক টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন করা হবে। ইসরায়েল এবং হামাস উভয়েই এই পরিকল্পনায় সম্মতি প্রদান করেন এবং ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট সরকার মূলত একটি অরাজনৈতিক প্রশাসন, যা গাজার প্রশাসন পরিচালনা করবে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা প্রদান করবে। এটি ফিলিস্তিনি জনগণের সেবা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকে নজর রেখে গঠন করা হবে।
প্রথমদিকে, হামাস গাজায় প্রস্তাবিত টেকনোক্র্যাট সরকারের অংশ হতে এবং সরকারের নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিল। তবে, বৃহস্পতিবার কায়রোতে মিসরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা এই অবস্থান থেকে সরে আসে এবং টেকনোক্র্যাট সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সম্মতি জানায়। মিসর, যেটি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এই পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের শুরু থেকে মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার ছিল তিনটি মধ্যস্থতাকারী দেশ। এর মধ্যে মিসরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা এই সংঘাতের একাধিক দফায় শান্তি আলোচনা ও যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ছিল।
হামাসের নেতারা বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষে আরও জানায়, তাদের প্রধান লক্ষ্য এখন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে তারা ফিলিস্তিনের সব রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে চায়। এই পরিবর্তিত অবস্থান ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন এক দিক সূচিত করবে, যেখানে হামাস একত্রিত ফিলিস্তিনি জাতির স্বার্থে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
হামাসের এই পদক্ষেপ এবং তাদের নতুন অবস্থান, যা টেকনোক্র্যাট সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে, গাজার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটি একটি নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। মিসর, যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার এরকম একটি উদ্যোগে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সক্রিয় থাকবে, তবে বাস্তবতা কী হবে তা সময়ই বলবে।


