গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েল সফরকালে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, ইউএনআরডব্লিউএ এখন কার্যত হামাসের একটি সহযোগী সংস্থা হয়ে উঠেছে। এই মন্তব্যে ইসরায়েলি সরকারের অবস্থানের প্রতিধ্বনি দেখা যায়, যদিও আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) পূর্বে এই দাবিকে অগ্রাহ্য করেছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ইসরায়েল সফরকালে মার্কো রুবিও এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইউএনআরডব্লিউএ এখন হামাসের কার্যক্রমে সহায়তা করছে, যার ফলে সংস্থাটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা কমে গেছে। তিনি আরও বলেন, গাজার মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে এই সংস্থার অংশগ্রহণ আর সম্ভব হবে না, কারণ হামাসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য ইসরায়েলি সরকারের দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রতিধ্বনি। ইসরায়েল বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, ইউএনআরডব্লিউএ হামাসের অস্ত্র ও অর্থ সহায়তায় যোগসাজশ করছে। তবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এই অভিযোগ খণ্ডন করেছে এবং ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রমে হামাসের কোনো অবৈধ সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যের পর ইউএনআরডব্লিউএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় চলমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় তাদের উপস্থিতি অপরিহার্য। সংস্থাটি বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার জন্য অন্য কোনো সংস্থা এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম নয়। ইউএনআরডব্লিউএ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (আগের টুইটার) পোস্ট করে আরও জানায়, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতও তাদের কর্মকাণ্ডের বৈধতা নিশ্চিত করেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রম হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আমাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মেরুদণ্ড হলো ইউএনআরডব্লিউএ, এবং তাদের উপস্থিতি এই অঞ্চলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
গত ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে হামলার পর কিছু কর্মীর হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তুলে ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ইসরায়েল। তবে সংস্থাটি জানায়, তার কর্মীরা প্রতিটি কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং তাদের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র গাজার জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখন চরম সংকটাপন্ন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলার পর থেকে গাজার ৬৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া, চলমান ইসরায়েলি অভিযানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে এবং বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। মানবিক সহায়তার অভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, যার কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাজার মানবিক সংকট বর্তমানে এক ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। বহু ফিলিস্তিনি পরিবারের জন্য খাদ্য, পানি, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সহায়তা সংকটপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ এবং অবরোধের কারণে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, পরিবহন ব্যবস্থা, এবং অন্যান্য মৌলিক অবকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া, হাসপাতালে থাকা রোগীরা চিকিৎসা সুবিধার অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন, এবং শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়েছে।
বর্তমানে, গাজায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য, ওষুধ এবং আশ্রয়ের মতো মানবিক সহায়তা পৌঁছানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি গাজার জনগণের জন্য সহায়তা পাঠাতে চেষ্টা করছে, তবে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধ এবং হামাসের শাসনাধিকার গাজায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে অসুবিধা সৃষ্টি করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএনআরডব্লিউএ’র কার্যক্রম প্রত্যাখ্যান এবং হামাসের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে এখন বড় প্রশ্ন হলো, গাজার জনগণের জন্য কার্যকর মানবিক সহায়তা কিভাবে পৌঁছানো যাবে এবং এই সংকটের সমাধান কীভাবে আসবে।


