বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান শনিবার (২৫ অক্টোবর) সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ষান্মাসিক রুকন সম্মেলনে দলের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, যদি জামায়াত সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তাহলে তারা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবে এবং দেশের উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নেবে।
রফিকুল ইসলাম খান তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, জামায়াত রাজা হওয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় আসবে না। বরং, জনগণকে প্রজা বানানো হবে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা হবো জনগণের সেবক আর জনগণ হবে আমাদের ভাই-বন্ধু।’’ জামায়াতের এই প্রতিশ্রুতি দেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের একটি বড় অঙ্গীকার হিসেবে উঠে এসেছে। তার মতে, ‘‘সবাই মিলে আমরা এই সুন্দর বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ব ইনশাআল্লাহ।’’
রফিকুল ইসলাম খান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘দুর্নীতি যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’’ তার মতে, দেশের মানুষ বর্তমানে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ চায়, যেখানে সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকবে এবং জনগণ প্রকৃত উন্নয়নের সুফল পাবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দুর্নীতি বন্ধ করার মাধ্যমে জামায়াত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে একটি সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।
জামায়াতের পক্ষ থেকে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। রফিকুল ইসলাম খান জানান, ‘‘যদি জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, বাংলাদেশে কোনো বেকার থাকবে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতকে কাজে ও শক্তিতে রূপান্তরিত করব’’ এবং ‘‘রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মিল-কলকারখানা স্থাপন করা হবে’’।
এর মাধ্যমে জামায়াত দেশের শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বেকারত্বের হার কমানোর চেষ্টা করবে। এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে মূলত ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠা, কৃষি উন্নয়ন, এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নারী উন্নয়নও জামায়াতের একটি মূল এজেন্ডা হিসেবে উঠে এসেছে। রফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেন, ‘‘মা জাতির মর্যাদা সবার উপরে’’ এবং দেশের নারীদের জন্য তাদের দল শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি জানান, ‘‘মেয়েরা বিসিএস দেবে, আর্মিতে যোগ দেবে, সচিব হবে, ব্যাংকের ম্যানেজার হবে।’’ জামায়াতের এই পরিকল্পনা নারী শিক্ষা এবং সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধির দিকে নির্দেশিত।
এছাড়া, জামায়াত দেশের প্রতিটি মেয়েকে শিক্ষা প্রদান এবং তাদের চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এবং মেডিকেল কলেজে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে উদ্যোগী হবে।
জামায়াতের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হলো অমুসলিমদের প্রতি সমান অধিকার প্রদান। রফিকুল ইসলাম খান স্পষ্টভাবে বলেন, ‘‘আমরা তাদের সংখ্যালঘু মনে করি না।’’ তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে জন্মানো প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। ‘‘এদেশে জন্ম নেওয়া প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ সমান অধিকার পাবে,’’ বলেন তিনি।
এটি জামায়াতের পক্ষ থেকে একটি উদার ও ইনক্লুসিভ দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যেখানে সকল ধর্মের মানুষকে সমানভাবে বিবেচনা করা হবে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় কোনো ধরনের বৈষম্য ঘটবে না।
রফিকুল ইসলাম খান একাধিকবার জামায়াতের লক্ষ্যকে পরিষ্কার করেছেন, যে দলটি চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দুর্নীতি এবং দখলবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। তিনি বলেন, ‘‘কোনো সাংবাদিকই চান না চাঁদাবাজ বা দুর্নীতিবাজ কেউ টিকে থাকুক’’ এবং সাংবাদিকরা, নারী-পুরুষ সবাই চাঁদাবাজি সমর্থন করেন না।
এছাড়া, তিনি উল্লেখ করেন যে জামায়াত ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং জনগণের স্বার্থে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হবে।
রুকন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শাহিনুর আলম। অনুষ্ঠানে জেলা, শহর, পৌর ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন এবং জামায়াতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দলের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।
রফিকুল ইসলাম খানের বক্তব্য থেকে পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, জামায়াতে ইসলামী একটি আধুনিক ও মানবিক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে কাজ করছে। দলটি সরকারের বিরুদ্ধে বর্তমান অবস্থায় যে ধারা অনুসরণ করছে, তার মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের সেবা এবং দুর্নীতি মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা।


