ভারতে চলমান নারী ওয়ানডে ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাঝপথে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার। গত ২৩ অক্টোবর মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে এই ঘটনার শিকার হন তারা। একটি বাইক আরোহী দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের অনুসরণ করে এবং এক পর্যায়ে অশ্লীলভাবে তাঁদের শারীরিক স্পর্শ করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে, ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ান দুই নারী ক্রিকেটার খাজরানা রোড এলাকায় হোটেল থেকে বের হয়ে স্থানীয় একটি ক্যাফেতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাদের অনুসরণ করতে থাকে একটি বাইক। তারা যখন ক্যাফের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন বাইক আরোহী অশ্লীলভাবে তাদের শারীরিক স্পর্শ করে পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর, ওই দুই ক্রিকেটার দ্রুত হোটেলে ফিরে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেন।
নিরাপত্তা কর্মকর্তা ড্যানি সিমন্স স্থানীয় থানার সাথে যোগাযোগ করেন এবং এরই মধ্যে এসিপি হিমানি মিশ্র ঘটনাটি তদন্তে নেমে দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে, এমআইজি থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৭৪ নম্বর ও ৭৮ নম্বর ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়।
পুলিশ তদন্ত শুরু করার পর, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে অভিযুক্ত বাইক আরোহীর বাইকের নম্বর পাওয়া যায়। ওই নম্বরের মাধ্যমে পুলিশ অভিযুক্ত আকিল খানকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পুলিশ জানায়, আকিল খান পূর্বেও বিভিন্ন ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন হয়েছেন। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল এবং ভারতীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে এই ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করেছে এবং জানিয়েছে, তারা নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় মঞ্চে এমন ধরনের ঘটনায় সবার মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বকাপে আসন্ন খেলার পূর্বে এমন একটি ঘটনা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের মনোবলে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, পুলিশি তদন্ত ও অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের পর, পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৭৪ ও ৭৮ ধারায় মামলা দায়ের করেছে, যার আওতায় শ্লীলতাহানি এবং অশ্লীল আচরণের অভিযোগ উঠেছে। আইন অনুযায়ী, শ্লীলতাহানির মতো অপরাধে অভিযুক্তদের শাস্তি হতে পারে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। পুলিশ বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং আশা করা যাচ্ছে যে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় ভারতীয় সমাজে গুজব ছড়ানো ও সামাজিক মাধ্যমে অপব্যবহার রোধ করার প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, এমন ধরনের ঘটনা যখন ঘটে তখন সামাজিক নিরাপত্তা, বিশেষ করে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা ঘটনার তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তির শাস্তির ক্ষেত্রে কোনো রকম ছাড় দেবে না। ভবিষ্যতে, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান দুই নারী ক্রিকেটারের শ্লীলতাহানির ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ব্যবস্থায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা পুনরায় পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
ভারতে বিশ্বকাপ চলাকালীন এই ধরনের শ্লীলতাহানির ঘটনা ক্রীড়াঙ্গনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। যদিও পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তবে এই ঘটনার প্রভাব কেবলমাত্র খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার ওপরই নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ব্যবস্থার ওপরও পড়বে। খেলার মাঠে কোনো ধরনের অশ্লীলতা বা নিরাপত্তা সমস্যা চলতে থাকলে তা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ক্রীড়া বিশ্বকে আরও সতর্ক হতে হবে এবং আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।


