যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, দেশের মুসলিম সম্প্রদায় ও মসজিদগুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে অতিরিক্ত ১ কোটি পাউন্ড (প্রায় ১৪ কোটি টাকা) বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন। সম্প্রতি মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলা এবং মসজিদে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার, স্টারমার ইস্ট সাসেক্সের পিসহ্যাভেন মসজিদ পরিদর্শন করেন, যেখানে ৪ অক্টোবর একটি সন্দেহজনক অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটে। সফরকালে তিনি বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে, যাতে তারা “শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে” জীবনযাপন করতে পারেন।
স্টারমার আরও বলেন, “ব্রিটেন একটি গর্বিত ও সহনশীল দেশ। কোনো সম্প্রদায়ের ওপর হামলা মানে পুরো জাতি ও আমাদের মূল্যবোধের ওপর আঘাত।”
৪ অক্টোবরের অগ্নিসন্ত্রাসে পিসহ্যাভেন মসজিদের মূল প্রবেশপথ ও একটি গাড়ি পুড়ে যায়, তবে এতে কেউ আহত হয়নি। সাসেক্স পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং এটি ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় জীবননাশের উদ্দেশ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নতুন বরাদ্দকৃত তহবিলটি যুক্তরাজ্যের মসজিদ ও মুসলিম ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে ব্যবহার হবে। এতে সিসিটিভি ক্যামেরা, অ্যালার্ম সিস্টেম, নিরাপত্তা বেড়া ও প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের জন্য সহায়তা দেওয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগ মসজিদগুলোকে আরও নিরাপদ করতে সহায়ক হবে, যাতে ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা বা অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না হয়।
স্টারমার তার সফরের সময়, অগ্নিসন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত এক সদস্যের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এই ঘটনা এখনও তাদের জন্য মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেন, “উপাসনালয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী থাকা উচিত নয়, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ আমাদের সে প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।”
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে যুক্তরাজ্যে ইসলামবিদ্বেষী অপরাধে ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। সব ধর্মীয় ঘৃণাজনিত অপরাধের ৪৪ শতাংশই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘটেছে, যা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এই প্রবণতা থেকে বাঁচতে যুক্তরাজ্য সরকার ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ব্রিটিশ মুসলিম ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী আকিলা আহমেদ সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেকে যেন শান্তিতে, ভয়মুক্তভাবে জীবনযাপন করতে পারে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।” সরকারের এই উদ্যোগ মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর হামলা এবং মসজিদে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হওয়ার পর যুক্তরাজ্য সরকার তার পদক্ষেপ শক্তিশালী করেছে। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে যে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা মুসলিম সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা প্রদানে সহায়ক হবে এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতা আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।


