শীতের আগমন এবং যুদ্ধের ফলে গাজায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সেখানে লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য জরুরি আশ্রয় এবং শীতকালীন সামগ্রী সরবরাহে ইসরায়েলের কঠোর বাধার কারণে মানবিক সংকট গভীর হচ্ছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে, যা সম্প্রতি আনাদোলু বার্তাসংস্থা প্রকাশ করেছে।
ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, গাজার শীতপ্রবণ পরিস্থিতি এবং আশ্রয়ের অভাব দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে, শীতকালীন সামগ্রী যেমন, তাঁবু, কম্বল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য এখনো গাজার মধ্যে পৌঁছাতে পারছে না। এসব সামগ্রী বর্তমানে জর্ডান এবং মিসরের গুদামগুলোতে আটকে রয়েছে। এসব সামগ্রী দ্রুত গাজার মানুষদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে ইউএনআরডব্লিউএ আরও জানায়, “বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে যথাযথ সাহায্য পৌঁছাতে সহায়তা অবাধে প্রবাহিত হওয়ার প্রয়োজন। শীতের সময় জরুরি মানবিক সহায়তা ছাড়া তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।”
ফিলিস্তিনে সহায়তা প্রবাহে ইসরায়েলের বাধা দেওয়া সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। গত বৃহস্পতিবার, ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘কান’ জানায়, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনার পরও গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ-এর কার্যক্রম পুনরায় চালু হতে দেবে না। ইসরায়েলি সরকারের এক সিনিয়র কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশিত হয়।
ইউএনআরডব্লিউএ’র শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, গত অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) রায় দিয়েছিল যে, গাজার ফিলিস্তিনিরা যথেষ্ট পরিমাণ মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন না। সেই রায়ে বলা হয়, ইসরায়েলকে অবিলম্বে মানবিক সাহায্য প্রবাহে অনুমতি দিতে হবে এবং গাজার অধিবাসীদের খাদ্যাভাবে মৃত্যু ও অনাহারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। আইসিজে তাদের রায়ে ‘অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার’ বন্ধেরও নির্দেশ দিয়েছে।
গাজায় সহায়তা প্রবাহে বাধা দেওয়ার বিষয়টি এমন সময় সামনে এসেছে, যখন হামাসের সঙ্গে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে, কিছু মানবিক সহায়তা প্রবাহিত হতে শুরু করেছে, তবে ত্রাণ সরবরাহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য গাজার ভেতরে প্রবেশে ইসরায়েল এখনও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফার ভিত্তিতেই যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কার্যকর হয়।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে, ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং পরবর্তী ধাপে গাজার পুনর্গঠন ও হামাসবিহীন প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে, ইসরায়েলের শর্তাধীন এই যুদ্ধবিরতি গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহের ওপর বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করছে, যা গাজার অধিবাসীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার কারণে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত গাজায় ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। গাজার অবরুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাধার কারণে এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তা সরবরাহ এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি ও তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে।
ফিলিস্তিনের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখা এসব মানবিক বিপর্যয়ের দ্রুত সমাধান চাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, শান্তির জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের কাছ থেকে আরও গঠনমূলক পদক্ষেপ আশা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
এ সময় গাজায় মানবিক সহায়তা এবং শীতকালীন সামগ্রীর প্রবাহ আরও দ্রুত নিশ্চিত করা না গেলে সেখানে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


