গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হল নুর বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই জাতীয় পার্টির (এনপির) বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত না হলে জাতীয় রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি দাবি করেন, যদি এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না আসে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা সম্ভাব্যভাবে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুন্ন করতে পারে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন। সভায় তিনি নির্বাচনের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কেও 자신의 দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।
নুরুল হল নুর বলেন, নির্বাচনকে বিঘ্নিত করার কোনো উদ্যোগে জনগণের হাত সমর্থন করবে না—তবু তিনি মনে করেন, জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে স্পষ্টতা ও সিদ্ধান্ত জরুরি। তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির বিষয়ে ফয়সালা না হয়ে যদি আমরা নির্বাচনে যাই, তাহলে আমাদের জন্য অনিশ্চয়তার সময় অপেক্ষা করছে। এই জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ প্রয়োজনে নির্বাচনে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে।”
তিনি ফরিদপুর, মাদারীপুর ও খুলনা অঞ্চলের উদাহরণ টেনে বলেন, ঐসব এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থা ভঙ্গুর হওয়ায় বাহিরী নাশক কার্যক্রমের আশঙ্কা রয়েছে। এসব অঞ্চলে জাতীয় পার্টি যদি অভিযোজিতভাবে এলাকায় সক্রিয় থাকে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে সক্ষম হবে—এ কথা তুলে ধরে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।
সভায় নুরুল হল নুর জিএম কাদেরের পূর্ব বক্তব্যের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কিভাবে একজন রাজনৈতিক নেতা বললেন যে শুধু আওয়ামী লীগ দূর হলে কোনো নির্বাচনই সম্ভব নয়; একই ব্যাক্তি কীভাবে রাজধানীর পথচারণায় এবং উক্ত নেতা-সমর্থকদের পদচারণায় উপস্থিত থাকতে পারছেন, এ প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে তিনি সমালোচনামূলক মন্তব্য রাখেন।
নুরুল হল নুরের ভাষ্যে, গণঅভ্যুত্থানের সময় নাগরিক, ছাত্র- যুব ও তরুণরা ভ্যাকসিন হিসেবে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার করেছে—আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। তিনি বলেন, “এই গণআন্দোলনের অর্জনকে এখন সঠিকভাবে পরিচর্যা করে নির্বাচনে রূপান্তরিত করতে হবে; অন্যথায় রাজনীতিতে পুনরায় হানাহানি, মারামারি ও বিভাজন দেখা দেবে।”
আলোচনায় তিনি দেশের সাম্প্রতিক সময়ের একটি বিধসঙ্কটের সতর্কবার্তাও দেন—নির্বাচন বিলম্ব বা নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হলে তা রাজনৈতিক নেতাদের জন্যই বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা—গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন—এসব অর্জিত ও নিরাপদ রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
নুরুল হল নুর রাষ্ট্রীয় বিচার কার্যক্রমের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের কার্যক্রমে তারা খুশি এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিচার প্রক্রিয়াকে কেবল স্বচ্ছই করে না, জনগণের আস্থা অর্জনেও সহায়ক।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনী পরিবেশের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন অন্বেষণ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি পুনঃস্থাপনের ওপর জোর দেন। নুরুল হল নুর মন্তব্য করেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার নীতি মেনে চলতে পারে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে পরিবর্তনের পথ খোলে, তা দেশীয় গণতন্ত্রের জন্য অপেক্ষাকৃত ফলপ্রসূ হবে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি, বিরোধী দলের অবস্থা ও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেন। তাদের বক্তব্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমন্বয় বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বারবার উঠে আসে।


