বইমেলা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবের আশ্বাস: “মেলা হবে, বৈষম্যহীন হবে”

বইমেলা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিবের আশ্বাস: “মেলা হবে, বৈষম্যহীন হবে”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে, যাতে আগামী বছরও বইমেলা সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়। তিনি নিশ্চিত করেছেন, বইমেলা অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে, তবে মেলার সময় সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট ঘোষণা এখনও আসেনি। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ সময়সূচী নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, তবে মেলা না হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এ কথাগুলি তিনি রোববার (২৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি আয়োজিত ‘কেমন বইমেলা চাই’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বলেন।

আলোচনাসভায় বক্তৃতা প্রদানকালে শফিকুল আলম বলেন, “আমরা এমন একটি বইমেলা চাই, যেখানে আমাদের সব মানুষের বই থাকবে। যে কেউ যেকোনো বই লিখুক, যে কোনো মতের বই থাকুক, সব বই মেলায় রাখা হবে। পাঠক নিজের পছন্দ অনুযায়ী বই বেছে নিবেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, “বইমেলাটি অবশ্যই বৈষম্যবিহীন হবে। কেউ যেন অভিযোগ না করতে পারে যে, তার বই প্রকাশ বা বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এমনকি, যারা কোন বই প্রকাশ করতে চান বা বিক্রি করতে চান, তাদের সবার জন্য সমান সুযোগ থাকা উচিত।”

প্রেসসচিব গত বছরের বইমেলার প্রতি আক্ষেপ ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “আমরা এমন একটি বইমেলা চাই না, যেখানে এককভাবে ৪০ শতাংশ বই একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়। গত কয়েক বছর ধরে বইমেলা এমন একটি জায়গা হয়ে উঠেছিল যেখানে এক শ্রেণির বইয়ের একক আধিপত্য ছিল, বিশেষত শেখ পরিবারের বই। এসব বই কখনও কখনও প্রতারণা বা অন্যায়ভাবে কিছু টাকা-পয়সা কামানোর উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হয়েছিল।

বইমেলার গত বছরের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান। তিনি বলেন, “বিগত বছরের বইমেলা পুরোপুরি দলীয় মেলা হিসেবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগের সদস্যদের মধ্যে বইয়ের স্টল এবং প্যাভিলিয়ন ভাগ করা হয়েছিল। প্রকাশকরা ফ্যাসিস্টদের সঙ্গী হয়ে গিয়েছিলেন।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এবারের বইমেলা হবে সকলের জন্য এবং তা বৈষম্যহীন হবে।

মোহন রায়হান বইমেলা বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “নির্বাচন হওয়া সত্ত্বেও বইমেলা বন্ধ করার কোনো কারণ নেই। ফেব্রুয়ারির মাসে বইমেলা হওয়া উচিত। যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে কিছুদিনের জন্য বইমেলা বন্ধ রাখা যেতে পারে, কিন্তু তা না হলে মেলার সময় বর্ধিত করা যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “বইমেলা যদি না হয়, তবে এটি একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে ধরা হবে। সরকারকে আবেদন জানাই, বইমেলা যেন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়।

আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন কবি গাজীউল হাসান খান, ফয়েজ আলম এবং অন্যান্য সাহিত্যিক ও প্রকাশকরা। তারা সবাই একমত হন যে, বইমেলা যেন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে এবং রাজনৈতিক বা ব্যক্তি স্বার্থের বাইরে একটি মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় উপস্থিত সৃজনশীল প্রকাশকরা মেলা ব্যবস্থাপনায় আরও স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার দাবি জানান। তাঁরা মনে করেন, বইমেলা একটি জাতির সাংস্কৃতিক আঙিনা, যেখানে সবাই সমানভাবে সুযোগ পাবে এবং এই মেলার মাধ্যমে দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি এগিয়ে যাবে।

এবারের বইমেলা যাতে সফল এবং বৈষম্যহীন হয়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা শফিকুল আলম আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল যে, সরকার মেলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এবং সকলের জন্য একটি মুক্ত ও উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি করার জন্য কাজ করবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ