বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে ইতিবাচক গতিতে এগিয়ে চলছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে আরও দ্রুতগতিতে কাজ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। তার মতে, সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে স্বাস্থ্য খাতের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
রোববার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত “ফ্রম এভিডেন্স টু ওয়ে ফরওয়ার্ড: মিড টার্ম রিফ্লেকশনস অন হেলথ এসডিজি প্রগ্রেস ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নুরজাহান বেগম বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।” তিনি আরও বলেন, মানুষের সুচিকিৎসা এবং মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ৭,৫০০ চিকিৎসককে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, সাড়ে ৩,০০০ নতুন চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে এবং একইভাবে সাড়ে ৩,০০০ নার্স নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নুরজাহান বেগম বলেন, “স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়ন শুধুমাত্র অবকাঠামো বা জনবল বাড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মায়ের মৃত্যুহার, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “স্বাস্থ্য সেবা সহজলভ্য করা এবং জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য বহুমুখী সমন্বয়ের প্রয়োজন।” এই উদ্দেশ্যে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করলে দেশের স্বাস্থ্য খাত আরও কার্যকরী হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসিত হয়েছে। তবে, তিনি মনে করেন যে, যেখানে বাংলাদেশের অগ্রগতি কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে, সেখানে আরও ডেটা-ভিত্তিক পরিকল্পনা এবং ফলাফল-নির্ভর কাজের প্রয়োজন। এসব কাজের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু এসডিজি টার্গেট পূরণ নয়, বরং মানুষের কাছে বাস্তব সেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করা।” এভাবে দেশ সঠিকভাবে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এসডিজি অর্জনের বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির পথে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হলেও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশেষত, মা ও শিশুমৃত্যুহার কমানো, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সেবার অভিগমনীয়তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সরকারের বর্তমান পদক্ষেপগুলো সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তবে ভবিষ্যতে কার্যকরী পরিকল্পনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সাফল্য নিশ্চিত করা সম্ভব।


