চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে দেশীয় বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক ১ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকার সম্মিলিত মুনাফা অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে যেখানে পুরো বছরের মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৫ সালের প্রথম ৯ মাসেই ব্র্যাক ব্যাংক তার আগের বছরের মুনাফা ছাড়িয়ে গেছে। এই সাফল্য দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষত দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ মুনাফার রেকর্ড।
ব্র্যাক ব্যাংকের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৫২৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ১ হাজার ১১ কোটি টাকা।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারেক রেফাত উল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, “বছরের প্রথম ৯ মাসে আমাদের মুনাফা দেড় হাজার কোটি টাকার মাইলফলক ছাড়িয়েছে। এটি দেশীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মুনাফার রেকর্ড। ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা, পণ্য ও সেবায় নতুন উদ্ভাবন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক উদ্যোগ আমাদের এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যাংক খাতে যখন অনেক ব্যাংকের অবস্থা খারাপ, তখন ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। এর ফলস্বরূপ আমাদের আমানতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যার সুফল মুনাফায় পড়েছে।”
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংক ঋণের বিপরীতে ৫ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকার সুদ আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আমানতের সুদ ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, গত বছর যা ছিল ২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ঋণ সুদ আয় বেড়েছে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা এবং আমানতের সুদ ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
যদিও ঋণের সুদ আয় ও আমানতের সুদ ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও ব্যাংকটির মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা তাদের কার্যক্রমের শক্তিশালী অবস্থান এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা নির্দেশ করে।
ব্র্যাক ব্যাংকের প্রথম ৯ মাসে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা বা আয় ছিল ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। এই খাত থেকে আয় বেড়েছে ১ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে ব্যাংকটির খরচ তুলনামূলক কম ছিল, যার ফলে ব্যাংকটি অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংক ভবিষ্যতে তার সেবার পরিধি আরও বিস্তৃত করতে এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন দ্বারা আরও বেশি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। ব্যাংকটি গ্রাহক কেন্দ্রিক উদ্যোগ, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা, এবং সব শ্রেণির মানুষের জন্য সহজলভ্য আর্থিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
এই বছরের প্রথম ৯ মাসে অর্জিত মুনাফা ব্র্যাক ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি এবং শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করেছে। ব্যাংকটির সাফল্য দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অনুপ্রেরণা এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।


