যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমবারের মতো গম আমদানি শুরু, চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে প্রথম চালান

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথমবারের মতো গম আমদানি শুরু, চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে প্রথম চালান

বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আলোকে প্রথমবারের মতো সরকার-টু-গভর্নমেন্ট (G2G) ভিত্তিতে গম আমদানির কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই উদ্যোগের আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে, যার প্রথম চালান হিসেবে ৫৬,৯৫৯ মেট্রিক টন গম নিয়ে ‘এমভি নর্স স্ট্রাইড’ নামক জাহাজটি আজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।

এই চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এর মধ্যে গম আমদানির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে, বিশেষত সঙ্কটকালীন সময়ে।

চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানো ৫৬,৯৫৯ মেট্রিক টন গমের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নমুনা পরীক্ষার পর দ্রুত গম খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ৩৪,১৭০ মেট্রিক টন গম চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করা হবে, এবং বাকি ২২,৭৮৯ মেট্রিক টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

এটি বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ বিশ্ববাজারে গমের দাম বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের প্রেক্ষাপটে সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে, গত কয়েক মাসে গমের দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের খাদ্য বাজেটে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির মাধ্যমে এই পরিস্থিতি কিছুটা সুরাহা পেতে পারে।

এই চুক্তির আওতায় ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আসবে, যা পরবর্তী কয়েক মাসে ধাপে ধাপে দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আমদানি করা হবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এটি দেশের খাদ্য মজুতের ওপর চাপ কমাতে এবং বাজারে গমের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশে খাদ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, “এই গম আমদানি দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করছেন, এই ধরনের সরকার-টু-গভর্নমেন্ট চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য আমদানিতে আরও স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা আসবে।

বিশ্ববাজারে গমের দাম বৃদ্ধি এবং রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে গম সরবরাহ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ, যা মূলত গম আমদানির ওপর নির্ভরশীল, এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি স্থায়ী চুক্তি স্বাক্ষর করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে।

বিশ্ববাজারে গমের দাম গত কয়েক মাসে কিছুটা নিম্নমুখী হলেও, দেশে আটার দাম বাড়ছে, যা দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এই গম পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল করতে সক্ষম হবে।

এদিকে, খাদ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে আরও গম আমদানি করা হবে, যাতে দেশে খাদ্য সরবরাহের চাহিদা পূর্ণ করা যায়। এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে গম সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত দামও বাজারে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ফলে বাজারে গমের সরবরাহ এবং দাম নিয়ন্ত্রণে সহায়তা মিলবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর, এর প্রভাব দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর দৃশ্যমান হবে, এবং ভবিষ্যতে এমন আরো চুক্তি দেশের খাদ্য মজুত বৃদ্ধির দিকে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে, খাদ্য সংকট মোকাবিলা এবং বাজারে স্থিতিশীলতা আনার পথ আরও সুগম হতে পারে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ